সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

‘বন্ধ অফিসে’ ইয়াবা রেখে ইউপি সদস্যকে ফাঁসানোর অভিযোগ

আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৩৫

কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্যকে দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী। নয়াবাজার স্টেশনে বাদশা মিয়া মেম্বারের সেমিপাকা অফিস কক্ষের পেছনের টিনের ফাঁক দিয়ে ইয়াবা ঢোকানো হয়েছে দাবি করেন মেম্বার বাদশা মিয়ার স্ত্রী জুলেখা আক্তার।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন। ২৫ হাজার পিস ইয়াবা অফিস কক্ষে রাখার অভিযোগে বাদশা মিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।  

জুলেখা আক্তার বলেন, তার স্বামী সক্রিয়ভাবে যুবলীগের দায়িত্বশীল। ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে নির্বাচনে পরাজিত শক্তিরা তাকে ঘায়েল করতে ওৎ পেতে রয়েছে। 

বাদশা মিয়ার অফিসের পেছনের অংশ। যেখান দিয়ে যেকোন কিছু ঢোকানো সম্ভব দাবি পরিবারের। ছবি: ইত্তেফাক 

জুলেখা আক্তার আরও বলেন, তার স্বামী বাদশা মিয়া নয়াবাজারে যে অফিসে বসেন তা সেমিপাকা (টিন ও ইটের তৈরি)। অফিসের পেছনের অংশে টিনের ফাঁক দিয়ে যেকোনো কিছু ঢোকানোর সুযোগ আছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের লোকজন এনে মেম্বারকে পরিকল্পিতভাবে ধরিয়ে দিয়েছেন।  

তিনি আরও দাবি করেন, ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ছিলো। এতে যোগ দিতে ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে কক্সবাজার চলে যান যুবলীগ নেতা বাদশা মেম্বার। সমাবেশ শেষ করে নেতা-কর্মীরা এলাকায় চলে এলেও জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কারণে ৭ ডিসেম্বরও তার স্বামী বাদশা মিয়া কক্সবাজারে থেকে যান। পরেরদিন ৮ ডিসেম্বর তিনি এলাকায় আসেন। ৬ ডিসেম্বর থেকে তিনি এলাকায় না আসা পর্যন্ত বাদশা মেম্বারের অফিসটি বন্ধই ছিলো।

জুলেখা বলেন, ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি মাগরিবের নামাজ পড়তে হোয়াইক্যং নয়াবাজার স্টেশন জামে মসজিদের পুকুরে ওজু করেন। মসজিদে ঢোকার আগমুহূর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার অঞ্চলের কর্মকর্তাসহ অন্যরা ‘মেম্বারের সঙ্গে একটু কথা আছে’ বলে অফিসের সামনে নিয়ে যান। তখনও অফিস বন্ধ থাকার কারণে ফোন করে পিওনকে ডেকে এনে তালা খুলে সবাইকে বসতে বলেন তিনি। 

এরপরই মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের লোকজন বলে ওঠেন, অফিসে ইয়াবা মজুদ আছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনগণ জড়ো হন অফিসে। মাদকের কর্মকর্তাদের কথায় অবাক হয়ে বাদশা মিয়া অফিসের সব ড্রয়ার ও আসবাব খুলে দেখান। কোথাও কিছু না পাওয়ায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আসা একজন হঠাৎ বলে ওঠেন ফলস সিলিংয়ের ওপর পশ্চিম কোণায় আছে। সেখান থেকে কিছু ইয়াবা পেয়েছে উল্লেখ করে তারা মেম্বারকে নিয়ে যান। অথচ পেছনের যে ফলস সিলিংয়ের কথা বলা হয়ে সেখানে বাইরে দিয়ে যেকোনো কিছু ঢোকানোর সুযোগ রয়েছে।  

  টেকনাফের হোয়াইক্যং স্টেশনে বাদশা মিয়ার অফিসের পেছনের অংশ। ছবি: ইত্তেফাক 

এদিকে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মেম্বারকে ফাঁসনোর কথা দ্রুত গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ওয়ার্ডের অসংখ্য নারী-পুরুষ প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় বেরিকেড দেয়। পরের দিন (৯ ডিসেম্বর) এলাকাবাসী প্রধান সড়কে মানববন্ধন করে তার মুক্তির দাবি জানান।

জুলেখা আক্তারের প্রশ্ন কেউ তার অনৈতিক ব্যবসার মালামাল জনকোলাহল মুখর এলাকায় রাখবে? তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ সবার কাছে আকুল আবেদন; ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত বিষয়টি উৎঘাটন করা হোক। পাশাপাশি নিরপরাধ বাদশা মেম্বারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বাদশা মেম্বারের মা রাশেদা বেগম, বাবা নুর হোসেন, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মইনুল হোসেন চৌধুরী, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল গাফ্ফার, স্থানীয় সমাজ সেবক আব্দুস সামাদ উপস্থিত ছিলেন।  

ইত্তেফাক/এআই/পিও