থাইল্যান্ডে মারিজুয়ানা বিলের বিরোধীরা গাঁজার বিনোদনমূলক ব্যবহার বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটিতে গাঁজা চাষ ও সেবনের উদারীকরণের ফলে ব্যাংকক থেকে পাতায়া পর্যন্ত নতুন এক লাভজনক শিল্পের উদ্ভব হয়েছে। থাই সরকার গত ৯ জুন গাঁজার চাষ ও খাদ্য ও পানীয়তে এর ব্যবহারকে বৈধ ঘোষণা করে। নিষিদ্ধ মাদকের তালিকা থেকে গাঁজা বাদ দেয়।
এমন সিদ্ধান্ত কৃষি ও পর্যটন শিল্পকে উজ্জীবিত করবে এবং চিকিৎসায় গাঁজার গাছ ব্যবহৃত হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়। কিন্তু আইন প্রণেতারা উঠতি এই শিল্পকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌছাতে ব্যর্থ হন।
বিরোধী রাজনৈতিক দল মুভ ফরওয়ার্ড পার্টির নেতা পিটা লিমিয়ারোয়েনরাত বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিলটির দ্বিতীয়বার আলোচনার জন্য সংসদে উপস্থাপিত হলে মন্তব্য করেন, 'আমরা অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাঁজাকে বৈধ করার বিরুদ্ধে, যার সূত্রপাত ঘটেছে কোন রকম কার্যকর বিধিনিষেধ ছাড়াই গাঁজাকে মাদক দ্রব্যের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলার পর।
তবে মারিজুয়ানা সম্পর্কিত প্রস্তাবিত আইনটি এই বছরের মধ্যে, এমনকি আগামী ৭ মে থাইল্যান্ডের সম্ভাব্য সাধারণ নির্বাচনের আগে পাশ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গাঁজার বৈধকরণ ও কোভিড পরবর্তী আন্তর্জাতিক পর্যটকের থাইল্যান্ডে আগমন মারিজুয়ানা ব্যবসার দার খুলে দিয়েছে।
এতে বেড়েছে ব্যবসা ও মুনাফা করার সুযোগ। নতুন নতুন অনেক দোকান খুলেছে। পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয়রাও বিনোদনের জন্য গাঁজা সেবন করছেন।
পাতায়ার দ্য বুটেন্ডার গাঁজা ডিসপেনসারির একজন মালিক পাম্প চিতিরা বলছিলেন, 'দেরি না করে এই সুযোগে আমরা একটা দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম।' প্রতিদিন ৬০ জন ক্রেতা, যাদের অধিকাংশই পর্যটক, এই দোকান থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ থাই বাথ মূল্যের গাঁজা কিনছেন।
চার মাসের মধ্যে দোকানের মালিকেরা তাদের ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা করছেন। চিতিয়া বলেন, 'আমাদের দ্বিতীয় শাখাটি খোলা হচ্ছে এ বছরের শেষে।' রাজধানী ব্যংককের চিত্রও একই রকম। আইনের বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার দিন থেকেই এই শহরে নতুন অনেক দোকান খুলে যায়।
এসব দোকানের বিক্রেতারা খোলামেলা ভাবেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সেখানে গাঁজা বিক্রি ও সেবন চলছে। এক দোকানের মালিক পিঙ্ক কিটলিপাপর্ন ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'আমার মাসে প্রায় ৫০ হাজার বাথ উপার্জন করছি।'
দোকানটি বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় বিক্রি বাড়ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, 'অনেক পর্যটক বিমানবন্দরে নামার পরই গাঁজার সুবাস নিতে চান। আমরা তাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানাই।
গাঁজার ডিসপেনসারি এমন সব এলাকায় গড়ে উঠছে যেখানে পর্যটকেরা সাধারণত ঘোরাফেরা করেন না। ব্যাংককের উপকণ্ঠে হেম্পি নামের এক গাঁজার দোকান মালিক থানাকর্ন লুথাম্মাসর্ন ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'এই রাস্তায় চার থেকে পাঁচটা দোকান রয়েছে। ২৪ বছর বয়সী এই বিক্রেতা জানান, গাঁজা চাষ এবং তার দোকানে এর বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের তেমন কোনো জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়নি।
গাঁজার ক্রমবর্ধমান বিস্তার ও সহজলভ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে এটাকে সরাসরি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে অনেকে। থাইল্যান্ডের ফরেনসিক চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্মিথ শ্রীসন্ট বলেছেন, 'নিয়ন্ত্রিত করার জন্য একটি প্রবিধান পাস না করে আগেই গাঁজাকে বৈধতা দেয়া একটি ভুল পদক্ষেপ ছিল।' গত মাসে তিনি আদালতে গাঁজার গাছকে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য হিসাবে পুনরায় তালিকাভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছিলেন।
চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য এবং অর্থকরী ফসল হিসেবে গাঁজাকে বৈধতা করার স্থপতি বলা হয় থাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুলকে। ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তিনি জানিয়েছেন, 'গাঁজাকে বিনোদনের উপকরণ করা কখনই তার উদ্দেশ্যে ছিল না।
জনসমক্ষে গাঁজা সেবন করা থাইল্যান্ডে জনস্বাস্থ্য আইনের লঙ্ঘন। সরকার নভেম্বর থেকে একটি নতুন আদেশ জারি করেছে, এর আওতায় ব্যবসায়িক প্রাঙ্গণে বিনোদনমূলক গাঁজা ধূমপান নিষিদ্ধ এবং ফুলের কুঁড়ি নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে এটাকে নিয়ন্ত্রিত দ্রব্য হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
ভেন্ডিং মেশিন বা অনলাইন, পাবলিক পার্ক, বিনোদন পার্ক, উপাসনালয় বা হোস্টেলে এই ভেষজ আর বিক্রি করা যাবে না। নতুন এই আদেশ ২০ বছরের কম বয়সী, গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের জন্য গাঁজা সীমিত করার পাশাপাশি বিধি-নিষেধের আওতায় স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে ক্ষতি যা হবার তা এরই মাঝে হয়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ী বিধি-নিষেধকে পাশ কাটিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গাঁজার ব্যাপারটাকে স্পর্শকাতর অভিহিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিচালক এ নিয়ে ডয়চে ভেলের কাছে কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।