শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পঞ্চগড়ে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে রণক্ষেত্র

বিএনপি নেতা নিহত, পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক

আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:০৫

পঞ্চগড়ে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পঞ্চগড় জেলা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে বিএনপির এক নেতা নিহত হয়েছেন। পুলিশসহ আহত হন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরের পর পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

নিহত বিএনপি নেতার নাম আব্দুর রশিদ আরেফিন (৫০)। তার বাড়ি জেলার বোদা উপজেল্রা ময়দানদিঘী ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায়। সে ওই এলাকার খোরশেদ মুহুরীর ছেলে। তিনি ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। বর্তমানে তার লাশ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

ছবি: ইত্তেফাক
 
পুলিশ-বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিতে পঞ্চগড়ে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু করার আগেই পুলিশ মিছিলে বাঁধা দেয়। বাঁধা মেনে মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপসহ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এক থেকে দেড় ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিএনপি নেতা-কর্মীরাও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। বিকেল ৬টা পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়ক ও দোকানপাট বন্ধ ছিলো। সাইকেল, রিকশাভ্যান চললেও অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

ছবি: ইত্তেফাক

পুলিশের লাঠির আঘাতে ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রশিদ আরেফিন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান বাবুসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়। নেতা-কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। 

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তৌফিক আহামেদ আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে এক ব্যক্তির লাশ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তবে কীভাবে বা কি কারণে তিনি মারা গেছেন তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

ছবি: ইত্তেফাক
 
জেলা বিএনপির আহবায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিল শুরু করেছিলো। এ সময় পুলিশ আমাদের বাঁধা দেয়। তারা কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করতে থাকে। বিএনপির একজন নেতা নিহত ও প্রায় দুইশ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিলে পুলিশ হামলা করে একজনকে হত্যা ও নেতা-কর্মীদের আহত করার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তিনি। 

ছবি: ইত্তেফাক

সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ সুপার এসএম সির্জাুল হুদা তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন। ব্রিফিংয়ে পুলিশের পিটুনিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানিয়েছেন। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করার কথা বলা হয়। জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাভাবিকভাবেই আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করি। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি না করে লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে মিছিল করে এবং পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে ভাংচুর করার চেষ্টা করে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। যেহেতু পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং রাস্তায় ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় পুলিশ জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এতে তাদের মধ্যে ২০/২৫ জন এবং পুলিশের ১০/১২ জন আহত হয়। আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি বাইপাস রোগী। তিনি হৃদরোগজনিত কারণে মারা গেছেন তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহৃ ছিলো না। আগামীকাল তার ময়নাতদন্ত করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। 

ছবি: ইত্তেফাক

কেউ আটক আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, গ্রেফতার আপাতত কেউ নেই। সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। 

নিহত আব্দুর রশিদ আরেফিন (৪৫) ময়নাদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া নিহতের খবর নিশ্চিত করেন। কিন্তু পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন নাকি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন সেটা বলতে পারেননি। 

ইত্তেফাক/পিও