একের পর এক বিতর্কের মুখে কোণঠাসা জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী লামব্রেশট নববর্ষের এক ভিডিওর জের ধরে আবার রোষের মুখে পড়েছেন। চ্যান্সেলর শলৎস এখনো তাকে মন্ত্রীসভা থেকে সরাতে নারাজ।
নতুন বছরেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। তিনটি দলের জোট সরকারের নেতৃত্ব শুরু থেকেই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তার উপর ইউক্রেন যুদ্ধ অনেক হিসাব গোলমাল করে দিয়েছে।
সরকারি জোটের অভিন্ন কর্মসূচি রূপায়নের বদলে যুদ্ধের ধাক্কা সামলাতেই ব্যস্ত থেকেছে সরকার। বাড়তি এই চাপ মন্ত্রীসভা ও শরিক দলগুলোর মধ্যে বিবাদ বার বার প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। এবার নিজের দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন শলৎস।
২০২৩ সালে একাধিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হলে সরকারের মধ্যে আরও সমন্বয় ও মতৈক্যের জন্য চাপ বাড়ছে। শান্তির সময়ে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা তেমন নজর আকর্ষণ করে না। বছরের পর বছর ধরে জার্মান সেনাবাহিনীর বেহাল অবস্থার জন্য বিগত সরকারের ব্যয় সঙ্কোচ নীতিকে দায়ী করা হয়ে আসছে।
কিন্তু ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুরু হবার পর থেকে শলৎসের সরকার বিশাল অঙ্ক ব্যয় করে জার্মানির প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ সেই গুরুদায়িত্ব সামলানোর বদলে একের পর এক বিতর্কের ফলে ঘরে বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট।
রাজনীতিকদের জনপ্রিয়তার তালিকার সবচেয়ে শেষ স্থানে রয়েছেন তিনি। এবার নববর্ষ উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তার জের ধরে তাকে মন্ত্রীসভা থেকে সরানোর ডাক আরও জোরালো হচ্ছে। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সেই ভিডিওতে বাজির শব্দের কারণে তার কণ্ঠ ভালো করে শোনা যায় নি।
ইউক্রেন যুদ্ধের উল্লেখ করেও তিনি বিষয়টিকে অত্যন্ত লঘু করে তুলে ধরেছেন বলে অভিযোগ উঠছে। লামব্রেশট নিজে অবশ্য সোমবার (২ জানুয়ারি) পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছেন। জার্মান সরকার আপাতত প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অপসারণ বা পদত্যাগের বিষয়টিকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
সরকারের উপ মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ানে হফমান সোনবার জানান, এই মুহূর্তে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভিডিওর মূল্যায়নের কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মন্ত্রীর 'ব্যক্তিগত' ভিডিও সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করায় লামব্রেশটের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে।
বিরোধী ইউনিয়ন শিবির অবিলম্বে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে লামব্রেশটের পদত্যাগের দাবি করছে। সিডিইউ দলের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত সংসদ সদস্য সেরাপ গ্যুলার চ্যান্সেলর শলৎসের উদ্দেশ্যে এক টুইট বার্তায় লেখেন, লামব্রেশটকে মন্ত্রীসভায় রাখার প্রতিটি মিনিট দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই অবস্থায় কেউ কি আর জার্মানিকে গুরুত্ব দেবে?
শলৎস নিজে এখনো বিষয়টি নিয়ে নীরব রয়েছেন। হামবুর্গ শহরের শাসক মেয়র হিসেবে কার্যকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তিনি চাপের মুখে নিজের মন্ত্রীসভার কোনো সদস্যকে সরিয়ে দেন নি। নিজের সিদ্ধান্ত বদলের খুব বেশি দৃষ্টান্ত তার নেই।
এমনকি সম্প্রতি তিনি এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে লামব্রেশটের প্রশংসাও করেছেন। তবে এ যাত্রায় শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের দল, সরকার ও বিরোধীদের চাপ উপেক্ষা করতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্রেসার হেসে রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য লড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ার ফলে তার পদ খালি হবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সেই অবস্থায় শলৎস মন্ত্রীসভায় রদবদলের আওতায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সরিয়ে দিতে পারেন বলে কিছু মহল মনে করছে।