শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সেনাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, মোবাইল ব্যবহারকে দায়ী করছে রাশিয়া

আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩০

বছর শুরুর দিনে ইউক্রেনেরে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়ার ৮৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন, সেই হামলা সেনাদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার নজরদারি করে চালানো হয়েছিল বলে রাশিয়া জানিয়েছে।

ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এলাকার মাকিভকার একটি কলেজে থাকা সেনাদের ওপর পহেলা জানুয়ারি মধ্যরাতের কিছু পরে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়। রাশিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকার পরেও সেনারা সেগুলো ব্যবহার করছিল। 

বছর শুরুর দিনে ইউক্রেনেরে যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাশিয়ার ৮৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন।

সেটা অনুসরণ করেই তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ওই হামলায় আসলে কতজন নিহত হয়েছেন, তা যাচাই করা যায়নি। তবে এই যুদ্ধে হতাহতের যেসব সংখ্যা রাশিয়া এখন পর্যন্ত স্বীকার করেছে, তার মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি।

ইউক্রেন দাবি করেছে, ওই হামলায় অন্তত ৩০০ রাশিয়ান সেনা নিহত হয়েছেন এবং আরও চারশোর বেশি সেনা আহত হয়েছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, পহেলা জানুয়ারি মধ্যরাত একটার দিকে কারিগরি ওই কলেজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমার্স রকেট সিস্টেম থেকে অন্তত ছয়টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়। এর মধ্যে দুইটি আকাশেই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। বাকি চারটি কলেজে আঘাত করে।

ইউক্রেন দাবি করেছে, ওই হামলায় অন্তত ৩০০ রাশিয়ান সেনা নিহত হয়েছেন এবং আরও চারশোর বেশি সেনা আহত হয়েছেন।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) টেলিগ্রামে প্রকাশ করা একটি বিবৃতিতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের মধ্যে রেজিমেন্টর উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল বাচুরিন রয়েছেন। পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'তবে এর মধ্যেই এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, ইউক্রেনের হামলার সক্ষমতার মধ্যে থাকার পরে এবং নিষিদ্ধ থাকার পরেও সেনাদের ব্যাপকভাবে মোবাইল ফোনের ব্যবহার করার কারণে তারা হামলার শিকার হয়েছে। এসব কারণে শত্রুপক্ষ (আমাদের) সামরিক সদস্যদের অবস্থান শনাক্ত করে, হামলার স্থান নির্ধারণ করতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পেরেছে।'

হামলায় নিহতদের মধ্যে রেজিমেন্টর উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল বাচুরিন রয়েছেন।

এর পেছনে যে কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে বলে তদন্তে জানা যাবে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানানো হয়েছে রাশিয়ার পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেটা ঠেকাতেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এর আগে ওই হামলায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে ৬৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছেও এখন সেই সংখ্যা ৮৯ জন বলে জানানো হয়েছে। যদিও আসলে কতজন হতাহত হয়েছেন, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করার সুযোগ নেই। যুদ্ধে হতাহতের ব্যাপারে খুব কমই তথ্য জানিয়ে থাকে মস্কো।

এর আগে ওই হামলায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে ৬৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছেও এখন সেই সংখ্যা ৮৯ জন বলে জানানো হয়েছে।

যখন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়, তখন ওই কারিগরি কলেজটিতে নতুন নিয়োগ পাওয়া সেনাতে বোঝাই ছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে ভ্লাদিমির পুতিন যে তিন লাখ রিজার্ভ সেনা তলব করেছিলেন, এরা ছিলেন তারই অংশ। আশেপাশে অনেক গোলাবারুদও মজুদ করা ছিল।

হামলার ঘটনার পর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তুলে রাশিয়ার অনেক বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক জানিয়েছেন, সেনাদের এরকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকতে দেয়া ঠিক হয়নি।

 গত সেপ্টেম্বর মাসে ভ্লাদিমির পুতিন যে তিন লাখ রিজার্ভ সেনা তলব করেছিলেন, এরা ছিলেন তারই অংশ।

দোনেৎস্কে রাশিয়াপন্থী সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা পাবেল গুবারেভ জানিয়েছেন, ওই রকম একটি বাড়িতে এতো বেশি সেনার থাকার ব্যবস্থা করা ছিল 'ফৌজদারি অপরাধ'। এজন্য যাদের দায় রয়েছে, তাদের শাস্তি দেয়া না হলে সেটা হবে আরও ভয়াবহ।

মস্কোর স্থানীয় পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার আন্দ্রেই মেদভেদেভ জানিয়েছেন, হয়তো এজন্য সেনাদের দায়ী করা হবে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু আসলে দায়ী করা উচিত সেই কমান্ডারদের যারা একটি স্থানে এতো বেশি সেনাদের থাকতে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

দোনেৎস্কে রাশিয়াপন্থী সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা পাবেল গুবারেভ

নিহত প্রত্যেক সেনার পরিবারকে পাঁচ মিলিয়ন রুবল (৫৭ থেকে ৬৯ হাজার পাউন্ড) করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। 

সুত্রঃ বিবিসি

ইত্তেফাক/ডিএস