শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় আব্দুল মান্নান হাওলাদার নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি খাল দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় ভেদরগঞ্জ বাজারের খাল দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য নৌযান চলাচল করত। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে নৌ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম উপজেলার খালটি অব্যাহত দখল ও দূষণের কারণে নাব্যতা হারিয়ে এখন মৃত প্রায়।
ভূমি অফিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দখলকৃত খালটি জেলার অভ্যন্তরীণ নৌপথ হিসেবে এবং এর প্রবাহমান পানি কৃষকদের চাষাবাদের ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি খালটির প্রায় ১০ ফিট দখল করে আব্দুল মান্নান হাওলাদার ভবন নির্মাণ করছেন। এর জন্য স্থানীয় ভূমি অফিস বা পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। খালটির প্রায় ১০ফিট দখল করে পাইলিং দিয়ে ভবনের এক তলা নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে, ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। দখলকারী প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ এর প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। এছাড়া খালটি দখল হয়ে গেলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে স্থানীয়রা।
ভেদরগঞ্জের রামভদ্রপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্মকর্তা রেজা শাহ আলম জানায়, ভেদরগঞ্জ বাজারের ৩০ নাম্বর গৈড্যা ২৬১৪ ও ২৬১৫ দাগের জমিটি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত ভূমি এবং পেরিফেরি (জরিপ বিহীন) বিহীন। ১৯৯০ সালের ভূমি আইন অনুয়ায়ী যে সকল হাট বাজারের খাস জমি সরকারের পেরিফেরি ভুক্ত হয়েছে সে সকল অকৃষি ভূমির অর্ধ শতাংশ একসনা সেলামী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। তবে ওই সকল ভূমিতে কোনো প্রকারের স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করা যায় না। কিন্তু এই জমি পেরিফেরি ভুক্ত নয় তাই সরকারিভাবেও বন্দোবস্ত দেওয়ার কোনো বিধান নেই। তারপরও খালের মধ্যে ১০ ফিট আরও বাড়িয়ে প্রায় চার শতাংশ জমির ওপর ভবনটি নির্মিত হচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, খালের তীর ঘেঁষে রয়েছে শরীয়তপুর ও চাঁদপুর ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়ক। এখানে ভবন নির্মাণ করা হলে সড়ক ও খাল সংকীর্ণ হয়ে যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হবে।
অভিযোগ অস্বীকার আব্দুল মান্নান হাওলাদার জানান, ওই জমি তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি। কবে কার কাছ থেকে তিনি ওই জমি ক্রয় করেছেন এ প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ভেদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল বাসার চোকদার বলেন, পৌর এলাকায় কোনও ইমারত নির্মাণের আগে পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। অথচ অনুমোদন না নিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ভবনটির নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমামুল হাফিজ নাদিম বলেন, খবর পেয়ে মৌখিকভাবে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু এখন আবার শুনলাম কাজ চলছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খাল দখল করে ভবন নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। ওই জায়গায় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া এ ব্যাপারে খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।