মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

নেপালে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ, রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবি 

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫৯

নেপালে গণতন্ত্রের বদলে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট এই দেশটি বর্তমানে গণতান্ত্রিক হলেও, এই শতাব্দীর শুরুতে এটি ছিল রাজতান্ত্রিক। তবে নানা নাটকীয়তার পর গত দশকে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। গত বুধবার (১১ জানুয়ারি) আবারো তারা রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

জানা যায়, রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলেও দেশটিতে এখনো রাজতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমর্থক রয়ে গেছেন। তাই নেপালের সাবেক রাজপরিবারের হাজার হাজার সমর্থক গত বুধবার পুনরায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভে নামেন। 

নেপালে গণতন্ত্রের বদলে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ।

বিক্ষোভকারীরা সমাবেশের সময় রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহের মূর্তির চারপাশে জড়ো হন। নেপালের সাবেক এই রাজা ১৮ শতকে শাহ রাজবংশের সূচনা করেছিলেন। আর এ রাজবংশের শেষ রাজা ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। নানা নাটকীয়তার পর তিনি রাজার পদ ছাড়তে বাধ্য হন। 

পরে ২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে ও প্রজাতন্ত্রের আবির্ভাব হয়। এরপর থেকেই দেশটি গণতান্ত্রিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। তবে প্রতি বছরই পৃথ্বী নারায়ণের জন্মবার্ষিকীতে তার ভক্ত ও সমর্থকরা রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। 

বিক্ষোভকারীরা সমাবেশের সময় রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহের মূর্তির চারপাশে জড়ো হন।

এর আগের কিছু সমাবেশে পৃথ্বীভক্ত ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ার পর থেকেই বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে ওঠেন। তবে গত বুধবারের সমাবেশটি ছিল শান্তিপূর্ণ। তাছাড়া মোতায়েন থাকা পুলিশ এই সমাবেশের ওপর কঠোর নজরদারি রেখেছিল। 

এই দিনের সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা রাজতন্ত্রের প্রশংসাসূচক নানা স্লোগান দেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার রাজা পৃথ্বী নারায়ণের জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার নেপালে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। 

প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার রাজা পৃথ্বী নারায়ণের জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার নেপালে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। 

দাহাল নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটাতে ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মাওবাদী কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন। তবে বিক্ষোভ করলেও রাজার জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা ও সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ায় দাহাল সরকারকে ধন্যবাদ জানান বিক্ষোভকারীরা। 

রাম প্রসাদ উপ্রেতি নামে অবসরপ্রাপ্ত এক চিকিত্সক বলেন, 'নেপালে রাজতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা একজন আনুষ্ঠানিক রাজা খুঁজছি। তার পাশাপাশি আমরা একজন নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীকে মেনে নিতে রাজি আছি।'

দাহাল নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটাতে ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মাওবাদী কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেন।

২০০১ সালে প্রাসাদ হত্যাকাণ্ডের পর নেপালের রাজা হন জ্ঞানেন্দ্র। কিন্তু তিনি সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা প্রিয় ছিলেন না। এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো মাওবাদী বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ গড়ে তোলে। পরে ২০০৬ সালে নেপাল থেকে রাজতন্ত্র লোপ পায়। 

২০০৮ সালে দেশটির পার্লামেন্ট রাজতন্ত্র বাতিলের পক্ষে ভোট দেয়। ৭৫ বছর বয়সী সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র বর্তমানে একজন সাধারণ নাগরিক। তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নন।

ইত্তেফাক/ডিএস