রোববার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা আলীকদমের সর্বোচ্চ চূড়া মারায়ন তং

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২৭

 বান্দরবানের আলীকদমে অবস্থিত মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড় যার উচ্চতা প্রায় ১৬৮০ ফিট। অনেকে এই পাহাড়কে মারায়ন তং জাদি/মারায়ন ডং/মারাইথং নামে পরিচিত। পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় এক বৌদ্ধ উপাসনালয় রয়েছে, যার চারদিকে খোলা ও ওপরের দিকে চালা। এতে আছে বুদ্ধের এক বিশাল মূর্তি। এছাড়া পাহাড়ের ওপরের অংশটুকু সমতল। দর্শনীয় স্থান হিসেবে জায়গাটা বেশ চমৎকার।

দেখা গেছে, এখান থেকে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সেসবের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে জনবসতি। নিচে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। তার দুই কোলে দেখা যায় ফসলের ক্ষেত। পাহাড়ের চূড়ায় পছন্দকারী পর্যটকরা চলে আসেন বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মারায়ন তং এই জাদি পাহাড়ে।

এই পাহাড়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে হাঁটতে হয় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা। ট্রেইলের শুরু থেকে একদম চূড়া পর্যন্ত পুরোটাই খাড়া রাস্তা। বর্তমানে জাদিটি পূর্ণসংস্কারের কাজ চলছে। মারায়ন তং পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। এদের মধ্যে ত্রিপুরা, মারমা ও মুরুং অন্যতম। এই পাহাড়ের নিচে থাকে মারমারা আর পাহাড়ের ভাজে ভাজে রয়েছে মুরুংদের পাড়া। পাহাড়ের ঢালে ঢালে তাদের বাড়ি। মাটি থেকে সামান্য ওপরে এদের টংঘর। এসব ঘরের নিচে থাকে বিভিন্ন গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ছাগল ও শুকর। কখনো কখনো প্রয়োজনীয় জ্বালানী কাঠও স্তুপ করে রাখা হয়।

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক, আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পরে যখন চূড়ায় উঠি সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে যাই। প্রকৃতির রূপ যে এতো সুন্দর এইখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না। বিকেলে সূর্য যখন পাহাড়ের কোলে ঘুমিয়ে যাচ্ছিল, প্রকৃতিকে অনন্য একটা রূপের দেখা যায়। মনে হয় পাহাড় নিজের ছায়াতলে খুব সযত্নে আলতো করে সূর্যটাকে লুকিয়ে রেখে দিচ্ছে। বিকেলের স্নিগ্ধ আলো আর সন্ধ্যার রক্তিম আকাশের মিষ্টি আবহ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানরত সবাইকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে দেয়। চারদিকে স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সময়টাতে চূড়ায় থাকা সবাই খুব গভীরভাবে অনুভব করা যায়। খুব কাছ থেকে প্রকৃতির হিংস্রা রূপ দেখে আসা আমরাই আবার প্রকৃতির করুনা উপভোগ করছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, মারাইতং আলীকদমের পর্যটন সম্ভাবনাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক এসে ক্যাম্পিং করে এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে। মারায়ন তং পাহাড়ে উঠার সময় সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

মারায়ন তং কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে আলীকদম বাসস্ট্যান্ড সরাসরি বাস আছে, ভাড়া পড়বে ১১০০ টাকা। তারপর সেখান থেকে অটো রিকশা নিয়ে আবাসিক রাস্তার মাথা নেমে যাবেন। বর্তমানে ভাড়া হোন্ডা দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়া যায় জন প্রতি ১৫০-২০০ টাকায়। এছাড়াও ঢাকা থেকে বাসে করে চকরিয়া যাবেন, ভাড়া পড়বে ১০০০ টাকা। চকরিয়া থেকে আলীকদম যাবার জন্য লোকাল জিপে উঠে পড়বেন, ভাড়া ১০০ টাকা। আলীকদম পৌঁছার আগেই আবাসিক নামক স্থানে নেমে যাবেন। সেখান থেকে হাতের ডানের রাস্তা ধরে দুই ঘণ্টা হাঁটলেই মারায়ন তং বা মেরাইতং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে যাবেন।

মারায়ন তং ট্রেকিং এ যেসব সাবধানতা অবলম্বন করবেন। এছাড়া যাত্রাপথে প্রচুর পরিমাণে পানি, গ্লুকোজ, স্যালাইন, শুকনো খাবার, ফাস্ট এইড বক্স, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নেবেন। বর্তমানে চুড়ায় একটি দুইটি দোকান রয়েছে, প্রায় সব কিছু পাওয়া যায় তবে দাম তুলনামুলক একটু বেশি। রান্না করতে চাইলে প্রয়োজনীয় উপকরণ ম্যাচকাঠি ও জ্বালানি নিয়ে যাবেন। আগুন জ্বালাতে শুকনো কাঠের অভাব হবে না। রাতে ক্যাম্পিং করতে চাইলে তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, হালকা চাদর নিযে যাবেন। তাছাড়া ওখানে থাকা দোকান থেকে এসব জিনিস ভাড়াও পাওয়া যায়।

তবে বিষেশজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী হার্ট ও শ্বাসকষ্ট আক্রান্তদের এ ট্রেকিং না করাই ভালো।

ইত্তেফাক/আরএজে 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন