বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

এক দশকে হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ 

দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৩৪

দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসা। শুধু পরিবারপরিজন নিয়ে অবসর সময়ে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার আনন্দই নয়, যান্ত্রিক জীবনে রেস্তোরাঁ এখন এক প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। রাজধানীতে স্বামী-স্ত্রী চাকরি করেন—এমন অনেক পরিবারে মাসিকভিত্তিতে খাবার সরবরাহ হয় রেস্টুরেন্ট থেকে। এই চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। এছাড়া পর্যটনকেন্দ্রিক রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও এখন জমজমাট।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগত এক দশকে দেশের রেস্তোরাঁ শিল্পে বড় পরিবর্তন এসেছে। শুধু ঢাকা নয়, জেলা ও উপজেলাতেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হোটেল-রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠছে। সেইসঙ্গে সারা দেশেই উন্নত বিশ্বের আদলে অনেক চেইন রেস্তোরাঁও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অনেক শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তাও এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। রেস্তোরাঁর প্রসারে এ শিল্পে বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থান হয়েছে। সম্প্রতি সরকারিভাবে রেস্তোরাঁকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ায় আগামী এক দশকে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার পাবে বলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

ছবি- সংগৃহীত

এ খাত নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপের তথ্য বলছে, এক দশক আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে মূল্য সংযোজন হয়েছিল মাত্র ১১ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। সেখানে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাত থেকে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৮৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় আট গুণ বেশি। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪। এক দশক আগে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৪। এই খাতে এক দশকে কর্মসংস্থানও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য। এই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩২ জনের। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৮ লাখ ৩৭ হাজার। বাকিরা নারী। এক দশক আগে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতে কর্মসংস্থান ছিল ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪ জনের।

তবে করোনার প্রভাবে হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক মালিক-কর্মচারী বেকার হয়ে যায়। কিন্তু এখন খাতটি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রেস্তোরাঁ মালিকরা জানিয়েছেন, অপেক্ষাকৃত কম পুঁজিতে এই ব্যবসা করা যায়। শুধু যেটা দরকার তাহলো এ খাতের প্রতি ভালোবাসা আর সদিচ্ছা। তারা জানিয়েছেন, দেশের মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে। এখন মানুষ কোনো উপলক্ষ পেলেই রেস্তোরাঁয় খেতে যায়। আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া দুইই তারা উপভোগ করে। এজন্য আগামী দিনে দেশে এ ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুবই ভালো।

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা চাকরিজীবী কবির হোসেন উপলক্ষ পেলেই পরিবারপরিজন নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে যান। তিনি বলেন, খাবার পরিবেশন থেকে শুরু করে খাবার মেন্যু, রেস্তোরাঁর পরিবেশ সবকিছুতেই বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন মানুষ রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গিয়ে আড্ডা, গল্প সবই করে। আবার পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানও এখন রেস্তোরাঁগুলোতে নিয়মিত হচ্ছে। উত্তরার বাসিন্দা আজমল হক বলেন, অনেক রেস্তোরাঁ বিভিন্ন সময়ে নানা অফার দেয়। এছাড়া বুফে’র অফার তো খুবই জনপ্রিয়। আসলে রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়াটা এখন উৎসবের মতো।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, আগামী ১০ বছরে এ শিল্প কয়েক গুণ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকার এ খাতকে শিল্প ঘোষণা করায় আগামী দিনে এ খাতের অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মানুষের জীবনযাপন রেস্তোরাঁ-নির্ভর। আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। বাড়ছে ব্যস্ততা। ফলে তারা রেস্তোরাঁর ওপর নির্ভরশীল হবে। একই কথা জানিয়ে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, এত দিন রেস্তোরাঁ ব্যবসার স্বীকৃতি না থাকায় তা সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে উঠতে পারেনি। এখন সরকার এ খাতকে শিল্প ঘোষণা করায় অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি; যা এ খাতের অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন