শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মহাকাশে মানুষের নতুন অভিযান কি সফল হতে পারে?

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৪৫

মহাকাশে তৈরি হচ্ছে শক্তির নতুন এক বিন্যাস, আমেরিকা ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা। কিন্তু মহাকাশ অন্বেষণের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, এই দুইটি পরাক্রমশালী দেশও নিজেরা এককভাবে এই কাজ করতে পারবে না।

এর আগে প্রযুক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জিং এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল নানা লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে, জানানো হয়েছে আগামী ১০ বছরের মধ্যে অন্য গ্রহে মানুষের বসবাস ও কাজ করার কথাও কিন্তু বিভাজিত এই বিশ্বে, যেখানে আন্তর্জাতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে, সেখানে এই স্বপ্ন কি বাস্তবসম্মত?

মহাকাশে তৈরি হচ্ছে শক্তির নতুন এক বিন্যাস, আমেরিকা ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা।

আর্টেমিস কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নাসার চাঁদে প্রত্যাবর্তনের অভিযান শুরু হয়েছে। এর তিনটি মিশনের প্রথমটি শুরু হয়েছে সফলভাবে। মানববিহীন এই ফ্লাইট দেখিয়ে দিয়েছে রকেট ও প্রযুক্তি ঠিকভাবেই কাজ করছে। দ্বিতীয় মিশনটি মানুষকে মহাকাশের আরো গভীরে নিয়ে যাবে। 

এতোটা দূরে সে আগে কখনো যায় নি। আর তৃতীয় মিশনে নভোচারীরা চাঁদে যাবেন এক সপ্তাহের জন্য। সেখানে তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবেন। দীর্ঘ মেয়াদে এই আর্টেমিস মিশনের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদকে মহাকাশের এমন একটি স্থান হিসেবে ব্যবহার করা যেখান থেকে মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালানো যাবে।

আর্টেমিস কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নাসার চাঁদে প্রত্যাবর্তনের অভিযান শুরু হয়েছে।

কিন্তু এই কর্মসূচির পেছনে খরচ পড়বে প্রায় ৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এজন্য আমেরিকার করদাতাদের প্রচুর মূল্য দিতে হবে, যারা ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক চাপ অনুভব করছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের অডিটর জেনারেলের অফিস থেকে কংগ্রেসের কাছে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। 

তাতে 'অবাস্তব উন্নয়ন কর্মসূচির' ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তারা খরচের হিসাবের ব্যাপারে নাসাকে 'আরো বেশি নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ' হতে বলেছে। যদিও নাসা যতো অর্থ চেয়েছে ২০২৩ সালে তার চেয়েও কম অর্থ পাবে, তবে কংগ্রেস এখনও নাসার মহাকাশ অভিযানের পরিকল্পনাগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে।

 এজন্য আমেরিকার করদাতাদের প্রচুর মূল্য দিতে হবে, যারা ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক চাপ অনুভব করছে।

চীনের মহাকাশ স্টেশন তিয়ানগং তাদের নির্ধারিত সময়সূচীর মধ্যেই কক্ষপথে পুরোপুরি কাজ করতে শুরু করেছে। চীনের মহাকাশ কর্মসূচিতে চাঁদে ও মঙ্গল গ্রহে মহাকাশ যান পাঠানো হয়েছে। তাদের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে চাঁদে মনুষ্যবিহীন একটি গবেষণা স্টেশন প্রতিষ্ঠা করা। 

এর পরে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা চাঁদের বুকে নভোচারী পাঠাবে। এর আগেও নভোচারীরা চাঁদে গেছেন। কিন্তু এর পরের ধাপ মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানো। এই কাজটি অনেক বেশি কঠিন। মঙ্গলগ্রহ চাঁদের চেয়েও ২৫০ গুণ বেশি দূরে এবং এই লাল গ্রহটিতে মানুষ পাঠাতে সক্ষম এরকম কোনো মহাকাশযান এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি।

চীনের মহাকাশ স্টেশন তিয়ানগং তাদের নির্ধারিত সময়সূচীর মধ্যেই কক্ষপথে পুরোপুরি কাজ করতে শুরু করেছে।

এমনকি বিজ্ঞানীরা যদি সেখানে একটি জ্বালানি ভর্তি রকেট প্রেরণ করা এবং সেই রকেট পাতলা বায়ুমণ্ডলের ওই গ্রহটিতে অবতরণ করানোর জন্য নিরাপদ উপায় খুঁজে বের করতে পারেন, তার পরেও কয়েক মাস মহাকাশে অবস্থানের পর নভোচারীদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার ব্যাপারে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, পরাশক্তি দেশগুলো পৃথিবীর বাইরে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এই প্রতিযোগিতা ছিল আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে।

 ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এই প্রতিযোগিতা ছিল আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে।

রাশিয়া প্রথম পৃথিবীর কক্ষপথে মানুষ পাঠিয়েছিল। এর কয়েক বছর পর আমেরিকা চাঁদে তাদের নভোচারী পাঠায়, যিনি সেখানে মার্কিন পতাকা পুঁতে আসেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএস নির্মাণের মধ্য দিয়ে সহযোগিতার এক সুবর্ণ যুগের সূচনা ঘটে ১৯৭০ এর দশকে। 

এটি শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। আরো ১৩টি সহযোগী দেশকে সঙ্গে নিয়ে এই দুইটি শক্তিধর দেশ এই স্টেশনটি নির্মাণ করে যা আজকের দিনে মহাকাশে সর্ববৃহৎ কোনো কাঠামো। এর মালিকানা  কোনো দেশের একার নয়। এই স্টেশনটি পরিচালনার জন্য একটি দেশ আরেকটি দেশের ওপর নির্ভরশীল।

রাশিয়া প্রথম পৃথিবীর কক্ষপথে মানুষ পাঠিয়েছিল।

বিভিন্ন দেশ তাদের মতভেদ দূরে সরিয়ে রেখে একসঙ্গে কাজ করলে মানবজাতি কী অর্জন করতে পারে, এই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তার একটি প্রতীক। কিন্তু বাস্তবতা ছিল কিছুটা ভিন্ন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে চীনের অংশীদার হওয়াতে বাধা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। 

ফলে চীন তাদের নিজেদের পথে অগ্রসর হয়। অতি সম্প্রতি, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। চাঁদে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ও রাশিয়ার দুইটি যৌথ মিশন বাতিল করা হয়। 

বিভিন্ন দেশ তাদের মতভেদ দূরে সরিয়ে রেখে একসঙ্গে কাজ করলে মানবজাতি কী অর্জন করতে পারে, এই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তার একটি প্রতীক।

মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধানে তাদের একটি যৌথ কর্মসূচিও রয়েছে। এর পরেও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ব্যাপারে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। স্টেশনটিকে কক্ষপথে পরিচালনার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে হবে। 

আমেরিকান ও ইউরোপীয়রা এখনও মস্কোতে রাশিয়ার মহাকাশ বিষয়ক সদরদপ্তর স্টার সিটিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ২০৩০ সালে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের আয়ু শেষ হয়ে যাওয়ার পর কী হবে?

মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধানে তাদের একটি যৌথ কর্মসূচিও রয়েছে।

লন্ডনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের মহাকাশ নীতি বিষয়ক বিশ্লেষক জুলিয়ানা সুয়েস জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রযুক্তি সেকেলে হওয়ার কারণে তারা অংশীদার দেশগুলোকে আগের মতো সহযোগিতা করতে পারে না। যে দেশটি প্রথম মহাকাশে গিয়েছিল, সেটি মহাকাশ থেকে প্রথম ছিটকে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক স্টেশনটিকে নামিয়ে আনার আগে রাশিয়া যদি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে না পারে, অথবা তারা যদি নিজেদের মহাকাশ স্টেশন তৈরি না করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ও নিষেধাজ্ঞার কারণে, তাদের হয়তো কোনো মানব মহাকাশ মিশন নাও থাকতে পারেবলে জানান তিনি।

রাশিয়ার প্রযুক্তি সেকেলে হওয়ার কারণে তারা অংশীদার দেশগুলোকে আগের মতো সহযোগিতা করতে পারে না।

রাশিয়ার এই দুর্দশা এমন এক সময়ে তৈরি হয়েছে যখন চীনের মহাকাশ কর্মসূচি খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। গত ১০ বছরে তারা ২০০টিরও বেশি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে। যদিও মহাকাশ কর্মসূচির পেছনে যুক্তরাষ্ট্র যতো অর্থ খরচ করে তার তুলনায় চীনের খরচের পরিমাণ অনেক কম।

প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও অর্থের ব্যাপারে চীন সচেতন। যেসব দেশকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, চীন সেসব দেশের প্রতি আহবান জানিয়েছে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে চীন এসব দেশের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষারও আহবান জানিয়েছে।

রাশিয়ার এই দুর্দশা এমন এক সময়ে তৈরি হয়েছে যখন চীনের মহাকাশ কর্মসূচি খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।

বর্তমানে ৭২টি দেশের নিজস্ব মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে। কারণ তারা আর পেছনে পড়ে থাকতে চায় না, যার ফলে মহাকাশকে কেন্দ্র করে নতুন এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, মহাকাশ। 

আবহাওয়ার পূর্বাভাস, যোগাযোগ, ব্যাঙ্কে লেনদেনের মতো বিষয়ের জন্য আমরা স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করি। বিভিন্ন দেশ তাদের গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি কর্মসূচির জন্যও এর ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে মহাকাশ ক্রমশই আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। 

বর্তমানে ৭২টি দেশের নিজস্ব মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে।

২০২১ সালে প্রায় ৫ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০ বছর পেছনে গেলে দেখা যাবে, প্রতি বছর ৮০০টির মতো স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হতো। মহাকাশে কোনো কর্মসূচি চালানো প্রযুক্তিগত দিক থেকে কঠিন এবং ব্যয়বহুল বিষয়। 

কোনো দেশই তা এককভাবে চালাতে পারে না। ফলে নতুন নতুন অংশীদারত্ব গড়ে ওঠছে, বিশেষ করে বিত্তশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে। ইলন মাস্কের কোম্পানি, স্পেস এক্স, ইতোমধ্যেই যাত্রীদের মহাকাশে নিয়ে যাচ্ছে। পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন রকেট তৈরির মাধ্যমে বিত্তশালী এই ব্যবসায়ী মহাকাশ ভ্রমণের খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

২০২১ সালে প্রায় ৫ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাজনের জেফ বেজোসও কক্ষপথে একটি বাণিজ্যিক স্টেশন গড়ে তুলতে আগ্রহী। এই স্টেশনের নাম দেওয়া হয়েছে 'অরবিটাল রিফ'। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত মহাকাশ স্টেশন 'মিরে' যুক্তরাজ্যের প্রথম নভোচারী ছিলেন হেলেন শারম্যান। তিনি বিশ্বাস করেন, বেসরকারি খাতে যে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে তার ফলে বর্তমান আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঢাকা পড়ে যেতে পারে। 

সত্যিকার অর্থেই এমন বাণিজ্যিকীকরণ ঘটবে যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানিকে একত্রিত করবে। এসব কোম্পানি কোথায় নিবন্ধিত সে ব্যাপারে আমরা খুব বেশি চিন্তা করবো না। মূল বিষয় হচ্ছে বিশ্বের উপকারের জন্য তারা কী করছে সেটা বলে জানান তিনি।

আমাজনের জেফ বেজোসও কক্ষপথে একটি বাণিজ্যিক স্টেশন গড়ে তুলতে আগ্রহী।

আর্থিক লাভের সম্ভাবনা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সহযোগিতার পথ তৈরি করে। বেসরকারি কোম্পানিগুলো হয়তো মহাকাশে নতুন এক সহযোগিতা তৈরি করবে, কিন্তু এসব কোম্পানিকে তাদের দেশের আইন মেনে চলতে হবে। ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশ যখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন এসব কোম্পানি রাশিয়ার সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়।

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার প্রধান ড. জোসেফ আশবাখার ইউরোপকে নতুন এই মহাকাশ প্রতিযোগিতায় রাখতে বদ্ধপরিকর। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারের আর্থিক সঙ্কোচনের পরেও, সম্প্রতি তিনি তার সংস্থার তহবিলের পরিমাণ প্রায় ২৪০ কোটি ডলার বৃদ্ধি করেছেন।

আর্থিক লাভের সম্ভাবনা ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সহযোগিতার পথ তৈরি করে।

তিনি বলেন, মহাকাশ হচ্ছে এমন একটি খাত যা খুব দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এবং গত কয়েক দশকের তুলনায় এখন এটি আরো দ্রুত গতিতে হচ্ছে। এখানে আমরা হেরে যেতে পারি না। এই খাতে আমাদের আরো জোরালোভাবে অংশ নিতে হবে। কারণ আমাদের সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানির জন্য আমি ব্যবসার নতুন সুযোগ তৈরি করতে চাই, যাতে তারা এগুলোতে অংশ নিতে পারে।'

ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণায় বিভিন্ন দেশই নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু এজন্য যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মধ্যে আছে একক 'গ্রুপ' অথবা 'ব্লক' হিসেবে তাদের একত্রিত হওয়া যাতে তারা নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় এবং অন্যান্য ব্লকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে পারে।

এই কাজটিই ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা বহু বছর ধরে সফলভাবে করে আসছে।তবে অন্যান্য গ্রহের ব্যাপারে এর পরের বড় উদ্যোগকে সম্ভবত যা আটকে রাখতে পারে তা হচ্ছে মহাকাশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন। 

ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণায় বিভিন্ন দেশই নেতৃত্ব দেবে।

১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ ৩১টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই 'আউটার স্পেস ট্রিটি' আইনটি আর আপডেট করা হয়নি। এই চুক্তিতে দেশগুলো মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের জুলিয়ানা সুয়েসের মতে, লক্ষ্য পূরণের জন্য এই আইনটি এখন আর উপযোগী নয়।

তিনি জানান, এতে কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি, বিত্তশালী ব্যক্তিদের বিষয়েও কিছু বলেনি। ১৯৬৭ সালে মহাকাশ যা ছিল, আজকের দিনে তা একবারেই আলাদা। 

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ১৯৭৯ সালে চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ ও এসবের বাইরেও বাণিজ্যিক অভিযান নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া তারা সবাই এতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার জোসেফ আশবাখার বিশ্বাস করেন আউটার স্পেস অর্থাৎ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বাইরের জগতের বিষয়ে নতুন কোনো চুক্তি না হলে মহাকাশ সংক্রান্ত নতুন প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, 'মহাকাশে স্যাটেলাইটের জন্য আমরা একই কক্ষপথ ব্যবহার করছি। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জন্য চাঁদের পৃষ্ঠদেশও একই। সেখানে আমরা কিভাবে একসঙ্গে কাজ করবো সে বিষয়ে একটি কর্মপদ্ধতি ও নিয়ম কানুন তৈরি করতে হবে।'

সুত্রঃ বিবিসি

ইত্তেফাক/ডিএস