শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মেয়াদোত্তীর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা সরকারের গলার কাঁটা!

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:০৫

গ্যাস-সংকটের কারণে চট্টগ্রামে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিইউএফএল সার কারখানায় বছরের অধিকাংশ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকছে। তার ওপর প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় প্রায় সময় যান্ত্রিক ত্রুটি লেগে থাকে। ফলে নিয়মিত সংরক্ষণ করতে বছরে প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান এখন সরকারের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। পুরোনো প্রযুক্তির এ ধরনের প্ল্যান্ট এখন কোথাও নির্মাণ করা হচ্ছে না। ফলে ব্যয় বাড়লেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার পর্যাপ্ত সাপোর্ট পাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাউজানে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট রয়েছে। এদের মধ্যে একটি ১৯৯৩ সালে ও অপরটির ১৯৯৭ সালে উৎপাদন শুরু হয়। নির্মাণের পর প্রায় ১০ বছর যাবত বেশ ভালো চলছিল। তখন গ্যাস-সংকটও তেমন ছিল না। চট্টগ্রামে মূলত ২০০৬ সাল থেকে গ্যাস-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। তখন থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত উৎপাদন ব্যাহত হতে থাকে। এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে দৈনিক ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন নিয়মিত না থাকায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ৩০ বছরের বেশি থাকে না। সেই হিসাবে ৪২০ মেগাওয়াটের উত্পাদনক্ষমতার এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। বিপুল টাকা খরচ করে ইতিমধ্যে দু-তিন বার ওভারহোলিংয়ের কাজও করতে হয়েছে। গ্যাস পাওয়া গেলেও উৎপাদন অনেক কমে গেছে। গত কয়েক মাস যাবত গ্যাস-সংকটে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্টিম টারবাইন পদ্ধতির বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে নির্মিত হচ্ছে না। এখন কম গ্যাসে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার আধুনিক প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকার রাউজান বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে নতুন প্রযুক্তিনির্ভর ৪০০ মেগাওয়াটের উত্পাদনক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। পরে নতুনটি নির্মিত হলে পুরোনো এই দুটি ইউনিট একেবার বন্ধ করে দেওয়া হবে। কারণ এই দুটির জন্য বরাদ্দকৃত গ্যাস দিয়ে নতুনটি চালানো হবে। গ্যাসের বরাদ্দ বাড়ানো হবে না।

এদিকে শিকলবাহায় গ্যাসনির্ভর ৬০ মেগাওয়াটের ইউনিট ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশে ২০১০ সালে ১৫০ মেগাওয়াটের একটি ও পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে ২২৫ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এই দুটিও গ্যাসনির্ভর। এখানেও গ্যাস-সংকটের কারণে একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে গাইডলাইন রয়েছে। কয়েক ঘণ্টা চালু রাখা যাবে। এর পর মেরামত করতে হবে। কিন্তু নানা কারণে  গাইড ফলো করা হয় না। এতে মেশিনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, ২২৫ মেগাওয়াটের ইউনিটে পুরোদমে উৎপাদন চালু রয়েছে। ১৫০ মেগাওয়াটের ইউনিট মেরামত কাজের জন্য প্রায় এক বছর যাবত উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।’

চট্টগ্রামে সরকারের আরেক বোঝা সিইউএফএল সার কারখানা। ১৯৭৮ সালে সার কারখানাটি নির্মাণ করা হয়। এটিতে দৈনিক প্রায় ৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গ্যাস-সংকটের কারণে বছরে দুই মাসও চালু রাখা যায় না। তার ওপর জরাজীর্ণ হয়ে পড়া মেশিনের ওভারহোলিং উৎপাদন ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিপুল টাকা খরচ করে কয়েক বার ওভারহোলিংয়ের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস পাওয়া গেলেও উত্পাদনক্ষমতা অনেক কমে গেছে। এখানে ইউরিয়া সার ও অ্যামোনিয়ার দুটি প্ল্যান্ট রয়েছে। শুরুতে ইউরিয়ার উত্পাদনক্ষমতা ছিল ১ হাজার ৭০০ টন। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস পাওয়া গেলেও ১ হাজার ২০০ টনের বেশি উৎপাদন করা যায় না। আর অ্যামোনিয়া উৎপাদন হচ্ছে ৬০০ টন।

ইত্তেফাক/ইআ