সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

জমিলার জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ ও বিজিবির মানবিকতা

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:২২

জমিলা বেওয়া। বয়স ৭৮ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছেন। ভারতীয় এই নাগরিকের জীবনের শেষ ইচ্ছা মৃত্যুর আগে তিনি বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারছিলেন না। তাই ইচ্ছাটি অপূর্ণই থেকে যাচ্ছিল। অবশেষে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে তিন মাস আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি।

সীমান্ত পেরিয়ে জমিলা মেহেরপুর শহরের কাসারিপাড়ায় ভাই রহিম বকসের বাড়িতে ওঠেন। তবে রহিম বকস মারা গেছেন অনেক আগেই। ভাইয়ের সন্তান আর নাতিদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটছিল জমিলার। মাস তিনেক যাওয়ার পর ভারতে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রাণ কেঁদে ওঠে তার।

ভাইয়ের সন্তান আর নাতিদের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন জমিলা বেওয়া। ছবি: ইত্তেফাক

গত ২২ জানুয়ারি বিকেলে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে ফিরে যাওয়ার সময় দামুড়হুদা উপজেলার মুন্সিপুর সীমান্ত বিওপি বিজিবি সদস্যদের কাছে আটক হন জমিলা। আটক করলেও পরে মানবিক কারণে বিজিবির পক্ষ থেকে ওই নারীকে ভারতে স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। পরে বিজিবির দীর্ঘ প্রচেষ্টায় বিএসএফ'র আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সমঝোতা শেষে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় স্বজনদের কাছে ফিরে যান জমিলা। চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়ন ৬ বিজিবি এসব তথ্য জানিয়েছে।

বিজিবি জানায়, গত ২২ জানুয়ারি বিকেলে দামুড়হুদা উপজেলার মুন্সিপুর সীমান্তের ৯৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে জমিলাকে দেখে বিজিবির টহলদলের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই বৃদ্ধা জানান, তার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার পাথরাদহ গ্রামের পশ্চিমপাড়ায়। তার স্বামীর নাম মৃত ফজলু। জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি জানতে পারে, তিন মাস আগে জমিলা ভারত থেকে বাংলাদেশে ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।

চারদিন নিরাপদ পরিবেশে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় জমিলা বেওয়ার। ছবি: ইত্তেফাক

মানবিক দিক বিবেচনা করে জমিলাকে ভারতে যেতে কোনো বাধা দেয়নি বিজিবি। তবে সীমান্তের ভারতীয় অংশে কর্তব্যরত ৮২ বিএসএফের মহাখোলা ক্যাম্পের সদস্যরা জমিলাকে ভারতে প্রবেশে বাধা দেন। পরে বিজিবির টহলদলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে বিএসএফের কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন, ওই নারীকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। এ অবস্থায় বিজিবি মুন্সিপুর কোম্পানি কমান্ডারের পক্ষ থেকে বিএসএফের মহাখোলা কোম্পানি কমান্ডারকে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠকের জন্য চিঠি দেন।

এদিকে, বৃদ্ধা জমিলাকে ফেরত নেওয়ার জন্যে বিজিবির যশোর রিজিয়নের নোডাল অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাযহার ২৪ জানুয়ারি বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার নোডাল অফিসার ডিআইজি শ্রী অমিরেশ কুমার আরিয়াকে অনুরোধ করেন। এরপর গতকাল বুধবার বিএসএফের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। একই দিন সন্ধ্যার দিকে মুন্সিপুর সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জমিলাকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছিল জমিলা বেওয়াকে। ছবি: ইত্তেফাক

দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ওই নারী কোন দেশের নাগরিক সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বরং মানবিক কারণে তাকে গত চারদিন নিরাপদ পরিবেশে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

৬ বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মো. ইশতিয়াক বলেন, ভারতীয় নাগরিক জমিলা বেওয়াকে আটকের পর থেকে হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তাকে নিরাপদে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ইত্তেফাক/এসকে