সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে সফল টিভি সিরিজ ছিল ১৯৭৩ সালের একটি স্পাই থ্রিলার। ধারাবাহিক এই গুপ্তচর কাহিনীর নাম ছিল ‘সেভেনটিন মোমেন্টস অফ স্প্রিং’।
কাহিনীর মূল চরিত্র ছিল ম্যাক্স অটো ভন স্টিয়ারলিৎজ নামে এক গুপ্তচর – যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে নাৎসি শীর্ষ রাজনৈতিক মহলের ভেতরে ঢুকেছিলেন চোর হয়ে। স্টিয়ারলিৎজ ছিলেন রাশিয়ার জেমস বন্ড।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭০এর দশকে খুঁজছিল একজন নায়ককে- যে সাহসী আর কম্যুনিস্ট ভাবাদর্শের মূর্ত প্রতীক। যে শক্তিধর, কিন্তু মৃদুভাষী- ইস্পাতের মত কঠিন। এমন একটা চরিত্র তখন অনুপ্রাণিত করেছিল বহু তরুণ রাশিয়ানকে যাদের অন্যতম ছিলেন বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
বলা হয় এই ছবিই মি. পুতিনকে গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগদানে অনুপ্রাণিত করেছিল। কীভাবে - সে প্রসঙ্গ একটু পরে।
অভিনেত্রী এলিয়েনোরা শাশকোভা অভিনয় করেছিলেন গুপ্তচর ম্যাক্সের স্ত্রী আলেকসান্ড্রার ভূমিকায়। বিবিসির ডিনা নিউম্যানকে বলছিলেন প্রত্যেকটা এপিসোডের সম্প্রচার ছিল একটা সাড়া জাগানো ঘটনা।
“তখন রাস্তাঘাট সব শুনশান ফাঁকা হয়ে যেত। মানুষজন কাজ থেকে তড়িঘড়ি ঘরে ছুটতো পরের এপিসোডে গল্প কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তা দেখতে। প্রথম পর্ব থেকেই প্রতিটি পর্বের গল্পে ছিল টানটান উত্তেজনা। পর্বগুলো দর্শকদের যাদুর মত টানত।”
সোভিয়েত গুপ্তচর স্টিয়ারলিৎজ কীভাবে ১৯৪৫এর বসন্তকালে নাৎসি ও আমেরিকানদের মধ্যে গোপন শান্তি আলোচনা ভেস্তে দিচ্ছেন তা গোগ্রাসে গিলত আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী পাঁচ থেকে আট কোটি সোভিয়েত টিভি দর্শক।
অভিনেত্রী শাশকোভা বলছিলেন, সোভিয়েত গুপ্তচরদের কাজের গুরুত্বই ছিল এই কাহিনীর মূল উপজীব্য।
“আমাদের দেশে গুপ্তচরদের খুবই সম্মানের চোখে দেখা হয়। কারণ এরাই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আসেন দেশের জন্য এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের জিততে সাহায্য করেন। যুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটি ছিল দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ করার একটা ছবি।”
পুতিনের জন্য অনুপ্রেরণা
‘সেভেনটিন মোমেন্টস অফ স্প্রিং’ ধারাবাহিক গুপ্তচর সিরিজের থিম সঙ্গীতটি ১৯৯০এর দশকের প্রথম দিকে আবার ব্যবহার করা হয় আরেকটি চলচ্চিত্রে।
ছবিটি ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের অল্পপরিচিত এক কর্মকর্তাকে নিয়ে। ঐ কর্মকর্তার নাম – ভ্লাদিমির পুতিন।
সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের মেয়রের দপ্তর থেকে স্থানীয় রাজনীতিকদের নিয়ে ধারাবাহিক এক সিরিজে বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়ছিল। যদিও ওই সিরিজে মাত্র একটি তথ্যচিত্রই শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়েছিল – সেটি ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে।
ঐ ছবিতে প্রথমবারের মত মি. পুতিন প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে তিনি কেজিবির একজন গুপ্তচর ছিলেন। সেখানে তিনি স্টিয়ারলিৎজের চরিত্রের অনুকরণে নিজেকে তুলে ধরেন। যেন বাস্তবে তিনিই স্টিয়ারলিৎজের মূর্ত প্রতীক। এমনকি সেভেনটিন মোমেন্টস অফ স্প্রিং ফিল্ম সিরিজের শেষ দৃশ্যটিও তিনি পর্দায় তুলে আনেন।
যে দৃঢ়তা, স্থিরতা, পেশাদারিত্ব ও সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা স্টিয়ারলিৎজের চরিত্রের বিশেষত্ব ছিল, সেই গুণগুলো ঐ তথ্যচিত্রে উপস্থাপন করে মি. পুতিন নিজের ভাবমূর্তি সমুন্নত করতে সক্ষম হন। বিবিসি বাংলা।