বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

পদ্মাসেতু-শরীয়তপুর সড়ক কীর্তিনাশায় সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:৩০

শরীয়তপুর-জাজিরা-পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোজ সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঐ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে দুটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতু নির্মাণের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, তার মধ্যে একটি সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা ব্যক্তিমালিকানা ৪ একর ৭৬ শতাংশ জমির শ্রেণি সিকস্তি (নদী শ্রেণি) হওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ঐ জমিতে বসবাস করা ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাচ্ছে না। আর জমি বুঝে না পাওয়ায় জাজিরার ডুবিসায়বর এলাকায় কীর্তিনাশা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। সেতু নির্মাণের মেয়াদ প্রথম দফা গত সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে। ছয় মাস বৃদ্ধি করার পর তাও আগামী মার্চে শেষ হবে।

শরীয়তপুর জেলাশহর থেকে জাজিরার নাওডোবা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঐ সড়কটি দিয়েই ঢাকায় যানবাহন চলাচল করছে। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, শরীয়তপুর-জাজিরা-পদ্মা সেতু সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার জন্য ২০২০ সালে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। ঐ প্রকল্পের আওতায় প্রেমতলায় ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত সেতু এবং কাজীর হাটে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয় সওজ। ৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ঐ দুটি সেতু নির্মাণ করার জন্য গত ২০২১ সালের ১ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয় জামিল ইকবাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে।

জানা যায়, সেতু দুটি ও ২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করছে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। ইতিমধ্যে অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ দেওয়া হয় ভূমির মালিকদের। এর মধ্যে ৪০ নম্বর ডুবিসায়বর মৌজার ৪ দশমিক ৭৬ একর জমির মালিকানা স্থানীয় ৫৮ জন ব্যক্তির। তাদের নামে পর্চা রয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা ভূমি উন্নয়ন কর দিয়েছেন। কিন্তু পর্চায় ঐ জমিগুলোর শ্রেণি সিকস্তি, যা নদী শ্রেণি হিসেবে ধরা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী সিকস্তি শ্রেণির জমির ক্ষতিপূরণ কেউ পাবেন না। তা সরকারি হিসেবে গণ্য হবে। অধিগ্রহণে থাকা ঐ ৪ একর ৭৬ শতাংশ জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার অনুরোধ জানিয়ে গত বছর ১৩ অক্টোবর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান। এতেও কোনো সমাধান মেলেনি।

ডুবিসায়বর এলাকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটিতে দুটি এভার্টমেন্ট ও দুটি খুঁটি (পিয়ার) নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে দুটি খুঁটির পাইল ক্যাপ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী মো. হাসান আলী বলেন, জমি বুঝে না পাওয়ায় আমরা কাজ করতে পারছি না। ডুবিসায়বর এলাকার সুলতান মাদবরের বাড়ি এসএ ৪৯৪ নম্বর দাগের ওপর। বাড়ির একটি অংশের ৩৭ শতাংশ জমি সেতু ও সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমির শ্রেণি সিকস্তি হওয়া ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন তিনি। সুলতান মাদবর বলেন, আমার দলিল, পর্চা সবই আছে। বিভিন্ন সময় খাজনা দিয়েছি। কিন্তু পর্চায় সিকস্তি লেখা থাকায় অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ পাব না, এমন কথা শুনছি।

সওজের শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, জমির শ্রেণি জটিলতায় অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে একটি সেতুর নির্মাণ কাজ আটকে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যাটি নিরসন করার জন্য। 

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, ২১টি এলএ কেসের মাধ্যমে ২৭ কিলোমিটার সড়কের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে দুটি সেতু রয়েছে। একটি সেতুর কিছু জমি সিকস্তি শ্রেণি হওয়ায় আইনগত বাঁধায় ঐ জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাচ্ছে না। আর টাকা ছাড়া মানুষ জমি ছাড়তে চাচ্ছে না। এর সমাধান করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম