বাংলাদেশ জাতীয় দলের তরুণ ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। দলে জায়গা পেলেও সেইভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ওয়ানডের মতো ব্যাটিং অথবা কোনো ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যাওয়া। এমন খেলায় খুশি নয় জাতীয় দলের সমর্থকেরা। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত সমলোচনার শিকার হন শান্ত। তাকে নিয়ে করা হয় বিভিন্ন ট্রলও। তবে এবার বিপিএলে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করছেন শান্ত। আর তাই এবার শান্তর হয়ে কথা বলেছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। এ সময় শান্তকে লম্বা রেসের ঘোড়া বলে উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন লিটনকেও।
আজ শুক্রবার বিপিএলের সিলেট পর্বে মাঠে নামার আগে গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মাশরাফি। আর সেখানেই মাশরাফি শান্তকে নিয়ে কথা বলেন। মাশরাফি বলেন, ‘আজকের লিটনকে সবাই বাহবা দিচ্ছে। শুরুর দিকে লিটনের এর চেয়ে বাজে অবস্থা ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আজকে মাশাআল্লাহ লিটন জাতীয় দলে থিতু হয়েছে। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম এবং হাথুরু ছিল—আমরা বিশ্বাস করতাম ওর মধ্যে কিছু আছে, যে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে লিড দেবে। আজকে কিন্তু লিটন প্রমাণ করেছে। কাল হয়তো খারাপ করলে আবারও শুরু করতে পারে। সে সময় লিটনের ধর্ম নিয়েও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে অনেক কথা হয়েছে। এসব কিন্তু চলছেই। এসবের ভেতর দিয়েই কিন্তু প্লেয়ারকে খেলতে হবে। আপনি তো মানুষের চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন আনতে পারবেন না। যেটা আপনি করতে পারবেন, নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখা।’
এ সময় লিটন আর শান্ত একই পথে রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শান্তর ক্ষেত্রেও কিন্তু একই জিনিস (লিটনের মতো ট্রল) হয়েছে। আপনি বিশ্বকাপে দেখেন, শান্ত কিন্তু আমাদের সবার বিপক্ষে গিয়ে (দাঁড়িয়ে) প্রায় ২০০ রান করে এসেছে। আগেও একদিন বলেছিলাম। পরে আবার স্ট্রাগল করেছে, এখন আবার রান করছে।’
এর আগে নিয়মিত পারফর্ম করতে না পারার পরও সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ছিলেন শান্ত। বিপিএল আর ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সে সেদিন বাঁহাতি এই ব্যাটারের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন নির্বাচকেরা। তাদের আস্থার প্রতিদান দিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৮০ রান করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের সেই ফর্ম ধরে রেখেছেন চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল)।
এখন পর্যন্ত সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে সাত ম্যাচে ২৮১ রান করেছেন শান্ত। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে খেলেছেন অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংস। তবু চট্টগ্রাম পর্বে দর্শক ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে ট্রল করেছে। যদিও এসব কানে না নিয়ে পারফর্ম করছেন শান্ত। মাশরাফি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশকে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে বাঁহাতি এই ব্যাটারের। লিটনের মতো শান্তকেও লম্বা রেসের ঘোড়া হিসেবে দেখছেন মাশরাফি। এমনকি সব সমালোচনা সহ্য করে নিজের খেলার দিকে ফোকাস করে যে সহনশীলতার প্রমাণ দিচ্ছেন, তা-ও দেখছেন তিনি। তবে দিন শেষে ভাগ্যের সহায়ও লাগবে বলছেন মাশরাফি।
তিনি বলেন, ‘শান্তকে অনেক কিছুর ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। যেহেতু প্লেয়ার উঠে আসার ব্যাপারগুলো এসব টুর্নামেন্ট থেকেই হয়। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্ট্রাগলিং পার্টটা থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মানসিকভাবে শক্ত থাকা খুব জরুরি। শান্তও কিন্তু লিটনের মতো বাইরের ব্যাপারগুলো নিয়ে অত মাথা ঘামায় না। আমার কাছে কেন জানি বিশ্বাস হয় যে এই ছেলেটা ‘লং রেসের হর্স’। আসলে দিন শেষে ওপরওয়ালার রহমতও প্রয়োজন হয়।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপকতার এই যুগে নিজেদের প্রজন্মকে ভাগ্যবান ভাবেন মাশরাফি। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই ভাগ্যবান যে আমাদের সময় সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। এখন যারা খেলছে তারা কিন্তু...যারা মানসিকভাবে শক্ত, তারা এসব থেকে দূরে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকে। কারা কী লিখছে, সেটা না দেখলে তাদের জন্য কাজটা সহজ হবে। কারণ, বাংলাদেশে এমন না যে যারা নিচ থেকে উঠে এসেছে, তাদের মৌলিক বিষয় (টেকনিক্যাল) এত শক্তিশালী না। আমাদের সিস্টেমটাই এ রকম নেই। আপনি দেখবেন, এ ধরনের টুর্নামেন্ট একটা বা দুইটা খেলেই জাতীয় দলে খেলে ফেলে। এর মানে এই না যে তার মৌলিক অনেক শক্তিশালী।’
বাংলাদেশের কিংবদন্তিদের বিদায় মাঠ থেকে হোক
গতকাল শান্ত-লিটনদের ব্যাপারে কথা বলার সময় সেখানে তার অবসরের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। সে সময় মাশরাফি জানান, মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার আশা করেন না তিনি। এমনকি বোর্ডের কাছ থেকে আর কোনো কিছু প্রত্যাশাও করেন না। তবে সাকিব আল হাসান বা তামিম ইকবালদের মতো ক্রিকেটারদের মাঠ থেকেই বিদায় দেখতে চান তিনি। মাশরাফি বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই ঐ সংস্কৃতিতে যাওয়া উচিত। ঐ সংস্কৃতি সেটআপ করা দরকার। যারা আছে এখন—সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ, তামিম, কেউ স্বীকার করুক বা না করুক; তারা বাংলাদেশের কিংবদন্তি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। তাদের ক্ষেত্রে যেন ঐ সুযোগ বাংলাদেশের মানুষ পায়। তারা যেন ঐ সম্মানটা নিয়ে মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারে। দীর্ঘদিন, দীর্ঘ সময় তারা শ্রম দিয়েছে।’
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘অনেক কিছু ত্যাগ করেই সময় দিয়েছে। মানুষ তো হিসাব করে কত টাকা পেল। কিন্তু তারা যে শ্রম দিয়েছে, দিনের পর দিন ত্যাগ করেছে, এটা কেউ জানে না। ঐ সম্মানটা যেন তারা পায়। যারা মধ্য বয়সে আছে, তরুণ আছে, তারা যেন বিশ্বাসটা পায়, আমাদের দেশ থেকে এতটুকু সম্মান নিয়ে যেতে পারব।’