উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। এ জেলায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয় শত শত বসতভিটা ও ফসলি জমি। নদী ভাঙ্গনরোধে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নিলেও কিছু বালুখেকো তিস্তা নদী থেকে মাসের পর মাস অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। শুধু বালু উত্তোলনই নয়, নদী থেকে প্রতিদিন শত শত বালু ট্রাক যোগে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে লাভবান হচ্ছেন বালু খেকোরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী তীরের বসবাসরত পরিবারগুলো।
এসব বিষয়ে মুখ খুললে নেমে আসে নানা নিপীড়ন ও নির্যাতন। বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনও এক প্রকার অসহায় তাদের কাছে। ফলে কোনোভাবেই তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্পার-২, চৌরাহা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ৫ থেকে ৭টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু উত্তোলন করে মজুদ করার পাশাপাশি ট্রাক যোগে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার এসব বালু দিয়ে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে সি সি ব্লক তৈরির কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদাররা। নিয়ম অনুযায়ী এসব ব্লক তৈরিতে পাটগ্রামের উন্নত বালু ব্যবহার করার কথা থাকলেও স্থানীয় ঠিকাদার হওয়ায় এসব নিয়ননীতি মানছেন না।
তবে অভিযোগ উঠেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিম্নমানের বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইউপি সদস্য বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে সরকার কাজ করলেও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মাসের পর মাস ড্রেজার মেশিন দিয়ে বিশাল বিশাল বালু স্তুপ করছেন।
তার ভাষ্য মতে, এসব বালু এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাক যোগে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে লাভবান হচ্ছেন বালু খেকোরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
চৌরাহা এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, কি আর বলব ভাই। প্রতিদিন এসব ড্রেজার মেশিন দিয়ে যেভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নিমিষেই নদী তীরের বসবাসরত পরিবারগুলো বাড়ীঘর বিলীন হয়ে যাবে। ফলে সরকারের সফল কর্মসূচি ম্লান হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, বালু খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছি না।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু সরকারদলীয় নেতার নামে তিস্তা নদী থেকে প্রতিদিন ট্রাক যোগে বালু বিক্রির হিড়িক পরে গেছে। এসব ট্রাক সকাল থেকে গভীর রাত অবদি চলছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জিআর সারোয়ার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিস্তা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কোনো সুযোগ নেই। এসব বালু দিয়ে সি সি ব্লক তৈরি করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকের জানান, এসব বালু দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ করা যাবে না। পাটগ্রামের বালু দিয়ে এসব সিসি ব্লক তৈরি করতে হবে।