বিশ্বকাপে নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। এরপর সেই বিশ্বকাপ শিরোপাকে একবার অন্তত হাতে তুলে নেওয়া, এর থেকে বড় স্বপ্নপূরণ আর কিছু হতে পারেনা। লিওনেল মেসির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, বিশ্বকাপ তো বটেই অন্যান্য আসরেও বারবার শিরোপা কাছে গিয়েও তা যেন থেকে গেছে অনেক দূরে।
কাতার বিশ্বকাপে শেষ হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এবার বিশ্বকাপ শিরোপাও হাতে নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আর্জেন্টাইন তারকা মেসির। আর এটা যেন এমন এক মুহুর্ত যখন স্বর্ণালী ঝকঝকে শিরোপাটি সকল কিছু ছাপিয়ে শুধুমাত্র মেসির দিকে তাকিয়ে বলেছে, ‘আসো, এটা হাতে নাও, এখন তুমি আমাকে স্পর্শ করতে পারো।’
বিশ্বকাপ শেষে নিজের একান্ত অনুভূতি এভাবেই বর্ণনা করেছে আধুনিক ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। সোমবার এক রেডিও সাক্ষাৎকারে মেসি এভাবেই তার শিরোপা জয়ের আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন।
বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারানোর পিছনে মেসি সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হয়েছেন আসরের সেরা খেলোয়াড়। আর্জেন্টাইন উরবানা প্লে রেডিও স্টেশনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মেসি বলেন, ‘শিরোপাটি যেন আমাকে ডাকছিল। সুন্দর একটি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ শিরোপা যেন আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। আমি ওটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কোন দ্বিধা করিনি, যাওয়ার সময় ইচ্ছা করেই চুমু খাই।’
ক্যারিয়ারে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে নেমে শেষ পর্যন্ত অধরা শিরোপাটি নিজের করে নিয়েছেন মেসি। এর আগে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরেছিলো আর্জেন্টিনা। এছাড়া, কোপা আমেরিকার তিনটি ফাইনালে পরাজিত হয়ে অবশেষে ২০২১ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা জয় করতে আর্জেন্টিনাকে সহযোগিতা করেন মেসি।
বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে মেসি আরও বলেন, ‘অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর আমাকে এটা উপহার দিয়েছেন।’ ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে আর্জেন্টিনা শিরোপা লাভ করেছিল। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মেসি উপহার দিলেন তৃতীয় শিরোপা। মেসি বলেন, ‘ম্যারাডোনার হাত থেকে ট্রফিটি পেলে আরো বেশি খুশি হতেন । তিনি অন্তত আর্জেন্টিনার শিরোপা জয় দেখতে পেতেন। তবে উপর থেকে তিনি আমাকে শক্তি জুগিয়েছেন। তিনি এবং আমাকে আরো যারা ভালবাসেন তাদের কারণেই আজ আমি শিরোপা জয়ের আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।’
কাতার বিশ্বকাপের পর অনেকেই মনে করেছিলেন মেসি হয়তবো আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিবে। কিন্তু তিনি খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক্লাব ফুটবলের সম্ভাব্য সব শিরোপাই জেতা হয়ে গেছে মেসির। বার্সেলোনার হয়ে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ১০টি লা লিগা শিরোপা ছাড়াও, পিএসজির জার্সি গায়ে লিগ ওয়ানের শিরোপা ও সাতবারের ব্যালন ডি’অর এসবই মেসিকে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তকমা দিয়ে দিয়েছে। বাকি ছিল শুধুমাত্র বিশ্বকাপ, যেটা অর্জন করে মেসি প্রমাণ করেছেন সেরা হতে হলে সবদিক থেকেই সেরা হতে হয়।