বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয় আসনে ভোট আজ

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫২

বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য ঘোষিত ছয়টি আসনে উপনির্বাচন আজ বুধবার। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোট নিয়ে উৎসবের আমেজ না থাকলেও প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই। নিরুত্তাপ ভোটে বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে বিজিবি ও পুলিশ। আশানুরূপ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত করতে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মাত্র তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আসনগুলো হলো :বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩। ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলটির কোনো প্রার্থী নেই। এই ছয়টি আসনে উপনির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করি নাই। বাকি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করার জন্য যা যা দরকার, সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। বুধবার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কমিশনার।

ইসি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে এসব উপনির্বাচনে সব ধরনের নির্বাচনি প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া আজ নির্বাচনি এলাকায় ট্রাক, পিকআপ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে আগামীকাল মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে ইসির অনুমতি নিয়ে যে কোনো যান চলাচল করতে পারবে। ছয়টি আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৬৭। ভোটকক্ষ ৫ হাজার ৮৯৮টি। মোট ভোটার ২২ লাখ ৫৪ হাজার ২১৭ জন। ছয়টি আসনে মোট ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) শূন্য আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচনি সরঞ্জাম নিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রগুলোয় পৌঁছে গেছেন। গতকাল পুরাতন স্টেডিয়ামে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের ব্রিফ করেন পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব। তিনি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে ভয়ভিতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার আপেল প্রতীক, স্বতন্ত্র প্রার্থী খুরশিদ আলম বাচ্চু মাথাল প্রতীক, জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা গোলাপ ফুল ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ মনোনীত প্রার্থী মো. নবীউল ইসলাম টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন (আপেল) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান খান (টেলিভিশন)।

বগুড়া স্টাফ রিপোর্টার জানান, বগুড়া-৬ (সদর) ও ৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরের পৌর উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ইভিএমসহ ভোটের নানা নির্বাচনসামগ্রী সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাড়ে ৪ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি নির্বাচনি এলাকায় ১৬ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

বগুড়া-৬ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু লড়ছেন নৌকা নিয়ে। তবে তার সঙ্গে নেই ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাসদ ও জাতীয় পার্টি। জাসদ থেকে লড়ছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক এমদাদ এবং লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর। প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন :বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ (ট্রাক), গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন (মাছ), বাংলাদেশ খেলাফতে আন্দোলনের প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাকের পার্টির মো. ফয়সাল বিন শফিক (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মাসুদার রহমান হেলাল (আপেল), আলোচিত আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম (একতারা) এবং সরকার বাদল (কুড়াল)।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মহাজোটের শরিক দল জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন মশাল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির মোস্তফা ফারুক, আলোচিত হিরো আলম, কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, মোশফিকুর রহমান কাজলসহ ৯ জন প্রার্থী রয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিরুত্তাপ ভোট :আশুগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলার বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে বিজিবি ও পুলিশ। তবে এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না। ভোট নিয়ে উৎসবের কোনো আমেজ নেই। ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে রাতদিন কাজ করছে আওয়ামী লীগ। ভোটের দিন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার পরও আশানুরূপ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বিএনপির দলছুট উকিল আব্দুস সাত্তারের পক্ষে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার, জাপা প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী এবং জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জুয়েল কেন্দ্রে কেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করলেও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ নিখোঁজ থাকায় তার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তেমন কোনো তত্পরতা লক্ষ করা যায়নি। প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনটি উন্মুক্ত রেখেছে আওয়ামী লীগ।

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল) আসনের উপনির্বাচনে  পীরডাঙ্গী এসআই সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা মাঠ থেকে কেন্দ্রগুলোতে ইভিএমসহ ভোটের অন্য সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৪ দলীয় জোট থেকে ওয়ার্কাস পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলী (হাতুড়ি), জতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম  (টেলিভিশন), জাকের পার্টির এমদাদুল হক (গোলাপ ফুল), ন্যাশনাল পিলপলস্ পার্টির (এনপিপি) সাফি আল আসাদ (আম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় (একতারা)। 

উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে আয়োজিত সমাবেশ থেকে বিএনপির সাত এমপি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। তার ভিত্তিতে ছয় আসনে উপনির্বাচনের তপশিল দেয় ইসি। একটি সংরক্ষিত আসন বিধায় সেটির নির্বাচন নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

 

ইত্তেফাক/ইআ