কাতারে ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে ফুটবলে প্রাপ্তির খাতাটা কানায় কানায় পূর্ণ করেছেন লিওনেল মেসি। কাতার বিশ্বকাপে সবকিছুই ছিল মেসির জন্য স্বপ্নের মতো। ভুল! অনেক অনেক ‘ভালো’র মধ্যে ‘বাজে আচরণে’র একটা বিতর্কিত দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন মেসি। বিশ্বকাপে নিজের সেই বাজে আচরণ মেসির নিজের কাছেও বাজে মনে হচ্ছে। বিশ্বকাপ জয় নিয়ে মুখে ভালো ভালো স্মৃতির কথা আওড়ালেও ভেতরে ভেতরে নিজের সেই আচরণের জন্য অনুশোচনার আগুনে পুড়ছেন তিনি।
বিশ্বকাপ জয়ের ৪৪ দিন পেরিয়ে গেলেও মেসির মনের ভেতরের সেই অনুশোচনার আগুন এখনো নেভেনি। এতদিন পর মেসি জানালেন, বিশ্বকাপের সেই বাজে আচরণের জন্য তিনি অনুতপ্ত। তিনি অকপটেই বলেছেন, নেদারল্যান্ডসের কোচ, খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সদস্যদের সঙ্গে ঐ আচরণ করা তার ঠিক হয়নি। ঠিক হয়নি গোলের পর তার ওভাবে উদযাপন করাটাও।
সম্প্রতি আর্জেন্টাইন রেডিও ‘উর্বানা প্লেই’কে দীর্ঘ এক সাক্ষাত্কার দিয়েছেন রেকর্ড সাত বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি। ঐ সাক্ষাত্কারেরই এক পর্যায়ে মেসি উগরে দিতে চেয়েছেন মনের ভেতরটা পুড়িয়ে ছারখার করা অনুশোচনার আগুনের দলাটা। কাতার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। মাঠের খেলায় ২-২ সমতার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। তাতে জয় নিশ্চিত হওয়ার পরই মেসি দৌড়ে নেদারল্যান্ডসের ডাগআউটের সামনে চলে যান। ডাচ কোচ লুই ফন গল, কোচিং স্টাফের সদস্য ও খেলোয়াড়দের সামনে গিয়ে দুই হাতের বুড়ো আঙুল কানে ঠেকিয়ে বিতর্কিত ভঙ্গিতে উদযাপন করেন মেসি। লুই ফন গলের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয় মেসির।
ম্যাচ চলাকালেও ৭০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলের পরও একইভাবে উদযাপন করেন মেসি। মেসি যে ডাচ কোচ লুই ফন গলকে ব্যঙ্গ করেই ওভাবে উদযাপন করেছিলেন, তা স্পষ্টই ছিল। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ফন গল নাকি বলেছিলেন, ‘মেসিকে বল পাস না দিলে সে খেলতে পারে না,’ সমর্থকদের কাছে এমন কথা শুনেই নাকি অমনটা করেন মেসি।
এমনকি ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের হয়ে জোড়া গোল করা ওয়াট ওয়েগহার্স্টকেও অপমান করেন মেসি। ওয়াট ওয়েগহার্স্ট কথা বলতে এগিয়ে এলে মেসি শুধু এড়িয়েই যাননি, তাকে শাসিয়েও ছিলেন মেসি। বলেছিলেন, ‘এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন নির্বোধ চলে যাও।’ এসব ঘটনায় তখনই সমালোচিত হন মেসি। নিজের সেই বাজে আচরণের কথা মনে করে মেসি দগ্ধ হচ্ছেন অনুতপ্তের আগুনে। বলেছেন, ‘আমি যেটা করেছিলাম, তা ঠিক করিনি। পরে যেটা ঘটেছিল সেটাও ভালো হয়নি। খেলার মধ্যে অনেক উন্মাদনা থাকে। খেলোয়াড়ের চাপে থাকেন। তার মধ্যে এমন কিছু ঘটে যেতেই পারে। আসলে সবকিছুই দ্রুত ঘটে গিয়েছিল। কিন্তু আমার সংযত থাকা উচিত ছিল।’
ওয়াট ওয়েগহার্স্টের সঙ্গে ঘটনা প্রসঙ্গে মেসি বলেছেন, ‘দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেলেছিলাম। ওটা সে ফ হয়ে গেছে।’ ম্যাচে মোট ১৫টি হলুদ কার্ড দেন রেফারি। তার একটি হলুদ কার্ড পেয়েছিলেন মেসিও। তাতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি, ‘বিশ্বকাপে আমরা সবচেয়ে খারাপ ম্যাচ খেলেছিলাম। গোটা ম্যাচে মোট ১৫ টি হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছিল। ঐ সময়ে ওদের খেলোয়াড়কে দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। আমি কখনোই চাই না, সবার সামনে আমার ঐ রূপটা প্রকাশ পাক। কিন্তু ঐ সময় নিজেকে আটকাতে পারিনি।’