একসময় ছিল সারি সারি বস্তি, রিকশার গ্যারেজ, অবৈধ স্থাপনা, সরু ও ভাঙা রাস্তা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নাম আসলেই এসব চিত্র সামনে আসতো সবার। সেই আগারগাঁও এখন রূপান্তর হচ্ছে প্রশাসনিক কেন্দ্রে। নান্দনিক ভবন ও প্রশস্ত সড়কে বদলে গেছে পুরো চিত্র। তবে পরিবেশ নষ্ট করে বিক্ষিপ্তভাবে যেন ভবন না উঠে সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
জানা যায়, জাতীয় সংসদের নকশাকার লুই আই কান শেরে বাংলানগর ঘিরে যে নকশা প্রণয়ন করেন, সেই নকশায় আগারগাঁও এলাকা ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রায় ৫০ বছর পরে সেটি এখন বাস্তবায়নের পথে। যার কারণে শেরে বাংলানগরে এখন পরিবর্তনের চিত্র দেখা যাচ্ছে।
আগারগাঁও এলাকায় পরিবর্তন শুরু হয় ২০০৯ সালের পর থেকে। ধীরে ধীরে সেখানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যেতে শুরু করে। প্রায় ১২টি বিশেষায়িত হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাদুঘর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ নানা কারণে এই এলাকায় লোকজনের বসবাস করার চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। বড় বড় প্রায় ২৫টি সরকারি দপ্তর এখানে চলে এসেছে। সব দপ্তর এক জায়গায় হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগরিক সুবিধা পাওয়া আরও সহজ হবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর আগারগাঁও স্টেশনের কারণে এই এলাকার গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
আগারগাঁও মোড় থেকে শ্যামলী শিশু মেলা পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কটি দুই লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ১৫০ ফুট প্রশস্ত এ সড়কের কাজ ৫৫ কোটি টাকা সরকারি অর্থায়নে করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। রাস্তার কাজ প্রায় শেষ। বর্তমানে প্রশস্ত ফুটপাত, সড়ক ডিভাইডার, বাস বেসহ কিছু কাজ বাকি। এছাড়া এই এলাকায় প্রধান সড়ক ছাড়াও ভেতরের সড়কগুলো পুরো এলাকার চিত্র পালটে দিয়েছে। যে রাস্তা ছিলো ২৫ ফিট সেটি করা হয়েছে ৬০ ফিট, যেটি ছিল ৫০ ফিট তা হয়েছে ১০০ ফিট। বিশ্বের আধুনিক শহরের মতো আধুনিক সুবিধা নিয়ে এ সড়কগুলো তৈরি করা হয়েছে। রাস্তার সঙ্গে রাখা হয়েছে প্রশস্ত ফুটপাত, সাইকেল লেন, রোডসাইড গাড়ি পার্কিং, সড়ক বিভাজকে লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি গাছ।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এখনো কিছু সরকারি দপ্তরের ভবনের কাজ চলছে। তবে বেশির ভাগই ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অফিসও মহাখালী থেকে চলে এসেছে আগারগাঁওয়ে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উলটো পাশে ১৩ তলা পর্যটন করপোরেশনের ভবন। এই ভবনে এসএমই ফাউন্ডেশনের অফিসও রয়েছে, যা আগে ছিল কাওরান বাজারে।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের অফিসও রয়েছে আগারগাঁওয়ে। এছাড়া নির্মাণ হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিজস্ব ১২ তলা ভবন। বিটিআরসি ভবনের সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) নিজস্ব ভবন। পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নিজস্ব ১৪ তলা ভবন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) অফিস এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) অফিস রয়েছে সেখানে। এই আগারগাঁওয়ে গড়ে উঠেছে এনবিআরের নতুন ভবনও। এই এলাকায় আরও রয়েছে, কপিরাইট ভবন, বাংলাদেশ বেতার, পরিবেশ অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অফিস, ডাক ভবন, জাতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি কমপ্লেক্স, কোস্ট গার্ড সদর দপ্তর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, পরমাণু ভবন, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, সিকিউরিটিস এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রভৃতি।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আলম বলেন, প্রশাসনিক কেন্দ্র ও মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে উত্তর সিটি করপোরেশন প্রায় ১৫০ ফুট প্রশস্তের একটি সড়ক করছে এখানে। বিভিন্ন সুযোগসুবিধা সম্বলিত এ সড়কটি পুরো এলাকার চিত্র পালটে দিয়েছে। একসময় এ এলাকা ছিল বস্তি ও অবৈধ স্থাপনা। এখন সেটি রূপ নিয়েছে আধুনিক এলাকায়।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অনেক জায়গা থাকায় এখানে প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সহজ হচ্ছে। তবে যেন বিক্ষিপ্তভাবে ভবন না তোলা হয়। কারণ এর জন্যও আলাদা পরিকল্পনা দরকার রয়েছে। এ এলাকায় যেসব ভবন গড়ে উঠেছে সেগুলোর অনেকটিতে এখনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা থাকা দরকার বলেও তিনি জানান।