শীত গ্রীষ্মের দোলাচল যেন ক্রমশ রহস্যময় হয়ে উঠছে। শুধু যাওয়া আসার আবর্তেই আছে। খনার বচনে শীত নিয়ে বলা হয়েছে ‘ঊনো বর্ষায় দুনো শীত’। অর্থাৎ যে বছর বৃষ্টি কম, সেই বছর শীত বেশি পড়ে। এবার বর্ষাকালে বৃষ্টির আধিক্য কম ছিল। যেটুকু বন্যা হয়েছিল, তা মূলত উত্তরের পাহাড়ি ঢল থেকে। মধ্য মাঘ পেরিয়েছে। ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’—এই প্রবাদ কথার পরিণত করেছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগকে শীতলতম সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় রাতের তাপমাত্রা হ্রাসের সঙ্গে দিনের তাপমাত্রা কমে খুব কাছাকাছি চলে আসে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে ‘উলটো হাওয়া’। ভোরের দিকে হালকা শীত এবং দেশের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে হালকা কুয়াশা বাদ দিলে মাঘের চিরপরিচিত সেই শীতের আমেজ নেই।
উত্তরবঙ্গ বাদে প্রায় সারা দেশে আবহাওয়ায় ‘অকালে’ বসন্তকালীন আমেজ বিরাজ করছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রতিদিনই অল্প অল্প করে বাড়ছে। বসন্তের আগমনী সুর বাজছে প্রকৃতিতে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আর ঘূর্ণাবর্তের দাপট চলছে। গতকাল ২১টি জেলায় তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রির ওপরে ছিল। টেকনাফ, রাঙামাটি, সীতাকুন্ডে তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রির ওপরে। আবহাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ হয়নি। দিনের তাপমাত্রা অনেক জেলায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে গতকাল থেকে দেশের তিনটি বিভাগে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বেশির ভাগ জেলায় ছয় দিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহ নামতে পারে। রংপুরের রাজারহাট, ডিমলাসহ পাঁচটি স্থানে তাপমাত্রা ছিল ৮-৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন আগে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পরে আরেক দফা শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার ঘটতে পারে দেশে। কিন্তু তা হয়নি। নিম্নচাপটি পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীলঙ্কা উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি আরও পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ফলে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না বাংলাদেশে। এখন আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ৭ ফেব্রুয়ারির পর দেশের অধিকাংশ জেলা থেকে এই বছরের শীত বিদায় নিতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক শেষে অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান বলেন, এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। তিনি বলেন, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, পাবনা, দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ছয় দিন রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জেলায় সকালবেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে। এই সময় ঢাকা শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ১৩ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, মাঘের দ্বিতীয় সপ্তাহেই দেশব্যাপী কমে এসেছে শীত। অধিকাংশ অঞ্চলেই রাতে ঠাণ্ডা থাকলেও অনেক এলাকায় দিনে অনুভূত হচ্ছে অস্বস্তিকর গরম। এই অবস্থায় দেশের কোথাও কোথাও শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।