দেশে প্রতি বছর দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ক্যানসারে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। যার মধ্যে ৯১ হাজার ৩৩৯ জন মৃত্যুবরণ করছেন। ক্যানসার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবক্যানের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ১৩ থেকে ১৫ লাখ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে মৃত্যুর এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। যার মূল ভুক্তভোগী হবে মধ্যম ও নিম্ন-আয়ের মানুষ। এ কারণে ক্যানসার প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে এবং ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষ্যে ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। সহযোগিতা করে বাংলাদেশ ক্যানসার ও তামাকবিরোধী জোট।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক, দূষিত বায়ূর কারণে আমরা নাজুক অবস্থায় আছি। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের খাদ্যে ভেজাল, মাছের খাবারে মুরগির খাবারে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। স্তন ক্যানসার শনাক্তে নিজে নিজের স্ক্রিনিংগুলো জানা এবং করা দরকার।
বারডেম হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ফুসফুসের ক্যানসারে নারী-পুরুষ উভেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সমন্বিতভাবে কাজ করা জরুরি। তিনি বলেন, বিষ খাইয়ে মারলে শাস্তি হয় কিন্তু খাদ্যে বিষ মিশিয়ে খাওয়ার কারণে আমাদের যে প্রাণঘাতী রোগ হচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে, এ জন্য কাউকে শাস্তি পেতে দেখা যায় না।
ওজিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, দেশে প্রতিদিন ১৮ জন নারী মারা যাচ্ছেন জরায়ু মুখের ক্যানসারে। অথচ এই ক্যানসার সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। এ জন্য সবার আগে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া ৯ থেকে ১৫ বছরের মেয়েদের যদি টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা যায় তাহলে অনেকাংশে জরায়ু মুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, প্রতি ছয় জন মানুষের মৃত্যুর কারণের মধ্যে একজন ক্যানসারে মারা যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের জীবনাচারণ পরিবর্তন করতে হবে। ধুমপান, তামাক বর্জন করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে করতে হবে। খাবার ভেজালমুক্ত রাখতে সব মন্ত্রালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি ক্যানসার রোগীদের জন্য একটি ২৪ ঘণ্টা হটলাইন নম্বর চালু করার কথা বলেন।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার ইপিডিমিওলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সঞ্চালনায় আলোচক ছিলেন বারডেম হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক, ওজিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, গাইনি অনকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ডা. হালিদা হানুম আখতার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল, অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পল্লিমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজুর রহমান ময়না, প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম প্রমুখ।