সম্প্রতি ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কারণে অনেককে আটক করা হয়েছে। অবশেষে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কয়েক হাজার বন্দিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল-জাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের বার্ষিকী উপলক্ষে এই ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কর্তৃক অনুমোদিত ক্ষমার কথা জানা গেলেও এতে শর্ত রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে আটক দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না। যারা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, বিশেষ করে যাদের মধ্যে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাদেরও ক্ষমা করা হবে না।
এটি বিদেশী সংস্থা বা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিকূল গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িতদের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়। দেশটির বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি এজে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ক্ষমা চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকেই তরুণ ও বিদেশিদের প্রভাব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছেন। তাদের অনেকেই এখন অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করছেন। তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু বিদেশী শত্রু ও প্রতিবিপ্লবীদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হয়েছে এবং এই যুবকদের অনেকেই এখন তাদের কর্মের জন্য অনুতপ্ত।' এই চিঠি পাওয়ার পর খামেনি তাদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেন।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনিকে দেশে হিজাব না পরার কারণে নৈতিকতা পুলিশ তেহরান থেকে গ্রেপ্তার করে। আটকের পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহশা আমিনী। এ ঘটনার প্রতিবাদে ইরানজুড়ে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়।
এই প্রতিবাদের জেরে দেশে ব্যাপক গ্রেপ্তার হয়। এটি আয়াতুল্লাহ খামেনির অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ আন্দোলন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এই প্রতিবাদ সহিংসতায় পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়। যাদের মধ্যে ৭০ জনের বয়স কম।
এ ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ কমে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশটির ডেপুটি জুডিশিয়ারি প্রধান সাদেক রাহিমি জানিয়েছেন, স্বভাবতই, যারা তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে না এবং সেই কর্মের পুনরাবৃত্তি না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের ক্ষমা করা হবে না।
নরওয়ে ভিত্তিক ইরানের একটি মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে দেশটিতে অন্তত ১০০ জন মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন।