মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

সরকারি দাম কম: দেড় মাসে একমুঠো ধানও সংগ্রহ হয়নি রৌমারীতে

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪৩

রৌমারীতে গত দেড় মাসে এক মুঠো ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য অফিস। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ধান সংরগ করতে না পারলেও খাদ্য অফিসের দাবি, ৭০ মেট্টিক টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে তারা।

বাজারের চেয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় কৃষকরা সরাসরি বাজারে বিক্রি করছেন তাদের আমন ধান। চালকল মালিকরা বলছেন, লোকসান গুনতে হলেও বাধ্য হয়ে খাদ্যগুদামে চাল দিতে হচ্ছে তাদের।

রৌমারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৫ নভেম্বর আমন ধান ও চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়। এ অভিযান শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। রৌমারী উপজেলায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৪৫২ মেট্টিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। অন্যদিকে চালকল মালিকদের কাছ থেকে ৩৭৫ মেট্টিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এতে চাল দিতে ৩০ জন চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

গত দেড় মাসে ৭০ মেট্টিক টন চাল সংগ্রহ করতে পারলেও এক মুঠো ধানও সংগ্রহ করতে পারেননি খাদ্য অফিস। সরকার প্রতি মণ চাল ১ হাজার ৬৮০ টাকা ও প্রতি মণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ১২০ টাকা করে।

তবে স্থানীয় বাজার ঘুরে জানা গেছে, কৃষকরা প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা করে।

সদর ইউনিয়নের কলাবাড়ী গ্রামের কৃষক শহীদ আহমেদ জানান, তিনি ৩ বিঘা জমি থেকে ১০০ মণ ধান পেয়েছেন। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে বেশি মূল্য পাওয়ায় ধান খাদ্যগুদামে দেননি।

তিনি বলেন, সরকারি গুদামে ধান দিতে অনেক ঝামেলা হয়। স্থানীয় বাজারে কোনো ঝামেলা নেই। দামও ভালো পাওয়া যায়। অন্যদিকে সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে বিল উত্তোলনসহ নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। এজন্য গুদামে ধান দেননি বলে জানান তিনি।

উপজেলার চুলিয়ারচর এলাকার আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। এতে যে ধান পেয়েছেন তার সবই বাজারে বিক্রি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

খাদ্যগুদামে না দিয়ে বাজারে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারমূল্যের চেয়ে সরকারের নির্ধারণ করা মূল্য কম। তাই যেখানে বেশি দাম পাচ্ছি, সেখানে ধান বিক্রি করছি। এতে কোনো ঝামেলাও নেই।

আরেক কৃষক এমদাদুল হক জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। এতে প্রায় ৭০ মণ ধান পান তিনি। সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে যে দামে ধান কেনার কথা, বাজারে তার চেয়ে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা বাজারেই তা বিক্রি করছেন।

রৌমারী মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনুর ভাষ্য, বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার আগে মিলাররা সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। চুক্তি অনুয়ায়ী নির্ধারিত সময়ে চাল না দিতে পারলে মিলারদের লাইসেন্স বাতিল করবে সরকার। বর্তমানে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় লোকসান দিয়েই চাল দিতে হচ্ছে খাদ্য গুদামে।

রৌমারী উপজেলা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আলাউদ্দিন বসুনিয়া জানান,  সরকার নির্ধারণ মূল্যের চেয়ে স্থানীয় বাজারেমূল্য বেশি পাওয়ায় কৃষকরা ধান দিতে আগ্রহী নন।

চাল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, চাল দিতে না পারলে চালকলের লাইসেন্স বাতিল হবে- এমন চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন চালকল মালিকরা। তাই লোকসান দিয়ে হলেও তারা চাল দিচ্ছেন খাদ্য গুদামে।

রৌমারী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেন, আমন ধান সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে। তাই কৃষকরা গুদামে ধান দিচ্ছেন না।

ইত্তেফাক/এসকে