এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সব বই হাতে পায়নি রাজশাহী বিভাগের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। অথচ গত ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এবারের শ্রেণি কার্যক্রম। এক মাস অতিবাহিত হলেও রাজশাহী বিভাগের মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ বই ছাড়াই চলছে নতুন বছরের পাঠদান।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগের চাহিদার তুলনায় এখনো ২৫ শতাংশ বই মেলেনি। বিভাগের আট জেলায় মোট চাহিদার ৭৪ দশমিক ৩৩ ভাগ বই হাতে পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী বিভাগে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি মিলে মোট ৫ হাজার ৮৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকে ৩ হাজার ৯২টি। মাদরাসা আছে ২ হাজার ২২৪টি এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫৬৭টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৪১ হাজার ১২৮ জন শিক্ষার্থী আছে। সব শিক্ষার্থীর জন্য নতুন পাঠ্যবই দরকার ২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬১২টি। এর মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে থেকে ৭৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে।
বিভাগের আট জেলার মধ্যে রাজশাহীতে ১ হাজার ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩২ লাখ ৬ হাজার ৫৫টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে সব বই বিতরণ করা হয়েছে। নওগাঁয় ৮৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৬ লাখ ৭ হাজার ৪৩৪টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে পৌঁছেছে ৭৬ শতাংশ। আর এখানেও সব বই বিতরণ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১ লাখ ৩ হাজার ৭৩০টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পেয়েছে ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এখানে প্রাপ্ত বইয়ের সবই বিতরণ করা হয়েছে। নাটোরে ৫৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৯ লাখ ৪ হাজার ৯৫৪টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পাওয়া গেছে ৭১ শতাংশ। বিতরণ করা হয়েছে ৭০ শতাংশ।
বগুড়ায় ১ হাজার ৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৬ লাখ ৯ হাজার ছয়টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পৌঁছেছে ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বিতরণ করা হয়েছে ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জয়পুরহাট জেলায় ৩৯৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ ৯ হাজার ৭৫৪টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পাওয়া গেছে ৮১ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রাপ্ত সব বই বিতরণ করা হয়েছে।
পাবনায় ৬১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৭ লাখ ৩ হাজার ৬৭৬টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পেয়েছে ৮৫ শতাংশ। বিতরণ করা হয়েছে ৮০ শতাংশ। সিরাজগঞ্জ জেলায় ৮৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৮ লাখ ৬ হাজার ১৯টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পাওয়া গেছে ৭৮ শতাংশ। এই জেলাতেও প্রাপ্ত সব বই বিতরণ করা হয়েছে।
রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাথী বসু বলেন, আমাদের স্কুলে বেশ কয়েকটা বই এখনো পাইনি। যেসব বই পাওয়া যায়নি সেগুলোর পিডিএফ কপি দিয়ে ক্লাস চলছে।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. নুরজাহান বেগম বলেন, রাজশাহীর সব স্কুলেই শতভাগ বই পাওয়া যায়নি। আমাদের স্কুলেও শতভাগ বই নেই। যে বইগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের যে বইগুলো এখনো পাওয়া যায়নি, সেগুলো অনলাইন থেকে শিক্ষকরা পিডিএফ ভার্সন নামিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রতিদিনই বই আসছে। যেটা আসছে সেটা বিতরণ করা হচ্ছে। যে ক্লাসে যে বই আসেনি ওয়েবসাইটে সেই বইটা দেওয়া আছে। শিক্ষকরা সেই বই ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করে সেটি দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যেই সব বই চলে আসবে। তখন এ সমস্যার সমাধান হয়ে হবে।