‘শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ। এজন্য আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। কারণ শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক। অতিরিক্ত শব্দদূষণের ফলে আমরা ধীরে ধীরে বধির জাতিতে পরিণত হচ্ছি। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমরা যেভাবে কাজ করছি, ঠিক একইভাবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। নেপাল যদি হর্নমুক্ত সিটি ঘোষণা করতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না ? শব্দদূষণ কারা করছে, তা নির্ণয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পে’র আওতায় সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পরিবেশ অধিদপ্তর এই মতবিনিময় সভার অয়োজন করে। এই প্রকল্পে জরিপ ও মতবিনিময় সভার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতায় আছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্র (ক্যাপস)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এমপি বলেন, ‘শব্দদূষণে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এটি নিয়ে কাজ করছে, বিষয়টি ইতিবাচক। উচ্চস্বরে অর্থহীন যে সংগীতচর্চা হচ্ছে, তা অচিরেই বন্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয়, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করতে হবে। শব্দদূষণ থেকে যেন জাতি মুক্ত হতে পারে, সেজন্য জাতীয় সংসদে তা উত্থাপন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে।’
স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘শব্দদূষণসহ পরিবেশদূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।’
সভাপতির বক্তব্যে স্থপতি মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, ‘শব্দ একটি আঘাতসৃষ্ট বাস্তব ঢেউ, এই ঢেঊ অসহনীয় পর্যায়ে গেলে তা শব্দদূষণে পরিণত হয়। এই ঢেউয়ের ভেতর এক জন মানুষ কত সময় বা কত দিন ধরে অবস্থান করছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। এটির ওপর নির্ভর করে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা বেশি। শব্দদূষণ রোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ডিটিসিএ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। শব্দদূষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সমন্বয় করতে ডিটিসিএ সহযোগিতা করবে। সরকারের এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষকে শব্দমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র প্রদান করতে হবে, যেন তারা শব্দের তীব্রতা পরিমাপ করে পদক্ষেপ নিতে পারেন। এছাড়া তিনি শব্দদূষণ রোধে রাস্তার পাশে সাউন্ড বেরিয়ারের জন্য গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, যানবাহনের সৃষ্ট শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ। তাই নিজ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের নিজেদেরই হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে। শব্দদূষণ রোধে চিহ্নিত পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বিআরটিসি, পুলিশ, রাজউক, সিটি করপোরেশনকে পৃথকভাবে দায়িত্ব ভাগ করে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, শব্দের মানমাত্রা বজায় রাখতে আবাসিক এলাকা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা সরিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ ভূমির ব্যবহার যেন ঠিক থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বিআরটিএ থেকে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার সময় মালিক ও ড্রাইভারদের নিয়ে হর্নের ভয়াবহতা নিয়ে সেমিনার করার মাধ্যমে সচেতন করতে হবে। এছাড়া তিনি প্রতিটি গাড়িতে শব্দদূষণ মনিটরিংয়ের জন্য একটি করে ট্রাকিং ডিভাইস স্থাপন করে তার সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগকে প্রদান করার পরামর্শ দেন।