আদানি ইস্যুতে উত্তাল ভারতের পার্লামেন্ট। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শিল্পপতি গৌতম আদানির ছবি তুলে ধরে পার্লামেন্টে সুর চড়ান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তার প্রশ্ন, কীভাবে সব ব্যবসাতেই ঢুকে পড়ে আদানি গোষ্ঠী? প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আদানিদের সম্পর্ক ঠিক কী? এমনই প্রশ্ন করলেন রাহুল গান্ধী। তার দাবি, ‘ভারত জোড়ো যাত্রায় যেখানেই তিনি গিয়েছেন, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, সর্বত্রই একটিই নাম শুনেছেন- ‘আদানি, আদানি এবং আদানি’।
গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বক্তৃতায় রাহুল বলেন, ‘তামিলনাড়ু থেকে কেরালা, কেরালা থেকে হিমাচল প্রদেশ, আমরা একটাই নাম শুনে এসেছি। সেটা হলো, ‘আদানি, আদানি, আদানি’। মানুষ আমার কাছে জানতে চাইছেন, কীভাবে প্রতিটি ব্যবসায় আদানিরা ঢুকে যান এবং প্রতিটিতেই ঐ শিল্পগোষ্ঠী সফল হয়।’ আদানি ইস্যুতে বিজেপির অবস্থান পরিষ্কার। দলীয় নেতাদের একটি বার্তায় বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠীকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেন্দ্রিক। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার এবং শেয়ারবাজারের ওঠানামার কোনো সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, আদানিদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার থাকলে তা শেয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিংবা রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) নেবে। যদিও পার্লামেন্টে আদানি ইস্যুতে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেনই। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত। এ নিয়ে রাহুল আবার মোদি এবং আদানির ছবি তুলে ধরে পার্লামেন্টে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় আদানিদের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু। এক জনই কাঁধে কাঁধে রেখে প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশে দাঁড়িয়েছেন। উনি (গৌতম) মোদির অনুগত থেকেছেন। নতুন করে গুজরাটকে সাজানোর ভাবনা মোদির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। একটু থেমে রাহুলের সংযুক্তি, ‘আসল জাদুর শুরু ২০১৪ সালে। যখন মোদি দিল্লি পৌঁছে গেলেন।
রাহুলের বক্তব্যের মধ্যেই বিরোধিতার সুর ওঠে বিজেপির পক্ষ থেকে। আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর মন্তব্য, ‘শুধু বড় অভিযোগ করলেই হয় না। সেই অভিযোগের উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিতে হয়।’ রাহুল অবশ্য থামেননি। তিনি বলতে থাকেন, কীভাবে একটি শিল্প সংস্থা কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই বিমানবন্দর ব্যবসার মধ্যে ঢুকে পড়ে। তিনি বলেন, ‘নিয়ম বদলে যায় এবং আদানিরা ছয়টি বিমানবন্দরের বরাত পেয়ে যান। জিভিকের মতো সংস্থার হাত থেকে সবচেয়ে লাভজনক বিমানবন্দর মুম্বাই বিমানবন্দর হাইজ্যাক করে আদানিদের হাতে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই আবার রাহুল ছুঁয়ে যান রাফায়েল-বিতর্কও। সব মিলিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লোকসভা কক্ষ।
আদানিদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, বাজারে বকেয়া ৮ হাজার ২৭৩ কোটি ফিরিয়ে দেবে আদানি গোষ্ঠী। এই ঘোষণার এক দিনের মধ্যে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। বাজারের বকেয়া ঋণ আগাম মিটিয়ে দিয়ে তিন সংস্থার কোটি কোটি শেয়ার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সোমবার আদানি গোষ্ঠীর তরফে বিবৃতি জারি করে এই ঘোষণা করা হয়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উন্নতি হলো তাদের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দরে। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর এক এক করে আদানি গোষ্ঠীর একাধিক সংস্থার শেয়ারে ধস নেমেছে। —আনন্দবাজার পত্রিকা