বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা

সংবাদপত্রশিল্পের জন্য শুল্ক ও কর অব্যাহতি চায় নোয়াব

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৩৩

সংবাদপত্র শিল্প বাঁচাতে নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাট অব্যাহতি চেয়েছে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। একই সঙ্গে এ খাতের করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। অন্যদিকে বিজ্ঞাপনে উৎস কর কর্তন বন্ধসহ বেশকিছু প্রস্তাব করেছে টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের সংগঠন এটকো।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট বৈঠকে এ দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

বৈঠকে নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘বিশ্বায়ন ও ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে ছাপা সংবাদপত্র প্রায় রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। কোভিড মহামারি তা তরান্বিত করেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতিতে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা সংবাদপত্র শিল্পের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি এনেছে। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সংবাদপত্র শিল্পের টিকে থাকা কঠিন।

নোয়াবের লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়, সংবাদপত্রের প্রধান উপাদান নিউজপ্রিন্টের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেড় বছর আগে প্রতি টনের দাম ছিল ৫৭০ ডলার, যা ১ হাজার ৫০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। এখন কিছু কমেছে, কিন্তু সার্বিকভাবে নিউজপ্রিন্টের দাম ঊর্ধ্বমুখী। নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন অনুযায়ী বিশেষ সুবিধা প্রদানের নিমিত্তে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবার তালিকায় সংবাদপত্র অন্তর্ভুক্ত। সংবাদপত্রকে সেবা শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হলেও নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক পণ্যই ভ্যাটমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। নোয়াবের পক্ষে তিনি এই ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান। নোয়াবের দাবিতে আরও জানানো হয়, সংবাদপত্র এরই মধ্যে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। এর করপোরেট কর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করা জরুরি।

বৈঠকে নোয়াবের পক্ষে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক ও নোয়াবের নির্বাহী কমিটির সদস্য মতিউর রহমান, ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও নোয়াবের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহফুজ আনাম, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক ও নোয়াবের কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরী। এ সময় অ্যাটকোর সহসভাপতি, ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। এটি ছিল আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের অংশীজন সভার প্রথম বৈঠক।

বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) সহায়তায় বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক খুঁজে বের করে কর আদায় করা হবে। তিনি বলেন, ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে ডেসকোর সহায়তায় বিদ্যুৎ মিটারের মাধ্যমে বাড়ি ও ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিক খুঁজে বের করা হবে। এর পর তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা হবে। বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক ট্যাক্স দেওয়ার যোগ্য।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এ জন্য তারা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সঙ্গে কাজ করছেন। বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক খুঁজে বের করে ট্যাক্স নিতে গেলে অনেকে বলবেন এ বাড়ি আমার নয়, মালিক এখানে থাকেন না। কিন্তু মিটারের প্রকৃত মালিক খুঁজে পেলে তখন অস্বীকার করতে পারবেন না।

আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘করের আওতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। ঠিকাদারদের টিন ও রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। অনেক কোম্পানির টিন সনদ দেখা হয়। এটার কারণে নেট বাড়ছে। অনেক অরগানাইজেশনের সঙ্গে কাজ করছি। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সঙ্গে কাজ করছি। গাড়ির মালিক ট্যাক্স দেন কি না? আমরা ডিপিডিসি ও ডেসকোর সঙ্গে কাজ করছি। বাড়ির মালিক খুঁজে ট্যাক্স নেব। ঢাকার সব ফ্ল্যাটের মালিকের ট্যাক্স নেওয়া হবে। মিটারের মালিক ধরে বাড়ির মালিক খুঁজে ট্যাক্স নেওয়া হবে। সেই কাজ আমরা করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, বলার সময় বলে ৬ কোটি মানুষ ট্যাক্স দিতে পারবে, এটা সঠিক নয়। ২০০৭ সাল থেকে ব্যক্তি আয়কর দেওয়া শুরু হয়। ২০০৭ সালের আগে ব্যক্তি করদাতা ছিলেন না। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স দিতে সময় লাগবে। অটোমেশন না হলে হবে না। অনেক টাকার মালিক ধরা যায় না, টাকা কম্বলের ভেতর রাখে। তবে, দ্রুত নেট বাড়বে।

ইত্তেফাক/এমএএম