সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ফরিদপুরে নতুন করে রুবেল-বরকতের সৃষ্টি হয়েছে: নিক্সন চৌধুরী

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:১৫

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেছেন, ফরিদপুরে দানবের পতন হয়েছে। স্বৈরাচারী মোশাররফের পতন হয়েছে। তার সঙ্গে পতন হয়েছে বরকত-রুবেল-ফোয়াদের মতো টেন্ডারবাজদের। কিন্তু ফরিদপুরে আবারও বরকত-রুবেলরা তৈরি হয়েছে। তারা নতুন করে টেন্ডারবাজি শুরু করেছে।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ফরিদপুর জেলা মাসিক আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় এ কথা বলেন তিনি। 

নিক্সন চৌধুরী বলেন, নতুন বরকত-রুবেলরা এলজিইডিতে টেন্ডারবাজি শুরু করছেন। কেউ শিডিউল কিনলে তাকে ধমক দিয়ে টেন্ডার নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা ফরিদপুরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে দানবসহ বরকত-রুবেলদের পতন ঘটিয়েছে। বর্তমানে যারা বরকত-রুবেল হয়েছেন, তারা জানেন না সেদিন শেখ হাসিনার অভিযান ছিল পার্টওয়ান অভিযান। তিনি দ্বিতীয় অভিযানও শুরু করতে পারেন। কেন না নতুন করে টেন্ডারবাজ বা দানব সৃষ্টির জন্য শেখ হাসিনা সেদিন অপারেশন করেননি।

গত ২০২০ সালের ৭ জুন ফরিদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফের বাড়ি থেকে তার ঘনিষ্ট দুই সহোদর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর দুই দিন পর খন্দকার মোশাররফ ঢাকা চলে যান।

ভাঙ্গা সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী আরও বলেন, যত বড় নেতা হোক ফরিদপুরে যদি কেউ টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি করেন তাহলে আমি ছাইড়া কথা কবো না। তিনি বলেন, একদিকে টেন্ডাববাজি করবেন, চাঁদাবাজি করবেন আবার বলবেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো তা হতে পারে না। দলে গুণ্ডা পালা যাবে না। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন কোনো বড় নেতাকে নিয়ে করেননি। তিনি দেশ স্বাধীন করেছেন দেশের সাধারণ মানুষকে নিয়ে। দলের মধ্যে গ্রুপিং করে বড় নেতা হওয়া যায় না। বড় নেতা হতে হয় জনগণের মন জয় করে। শেখ হাসিনা এখানে অনেককে দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা দাঁড়াইতে পারেন নাই। তাই চোখ রাঙাবেন না, ওই চোখ রাঙানিকে ভয় পাই না। ‘পুলিশকে দেখবেন’ বলে যে সব কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন তাদের বলি, ‘সাবধান হয়ে যান। চামচামির রাজনীতি বন্ধ করুন, না হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে।’

নিক্সন চৌধুরী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যে সব অফিসে টেন্ডারবাজি হচ্ছে আপনারা সেই কর্মকর্তাদের নিয়ে বসুন। তাদের ডেকে মিটিং করুন। ‘নিকো করে কাজ নেওয়া বন্ধ করুন। নিকো নিয়ে কাজ করে থু থু  দিয়ে রাস্তা লেপে আসে তিন মাসে তা নষ্ট হয়ে যায়। টেন্ডারিবাজি বন্ধ না হলে ফরিদপুরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সে পরিণতি ভালো হবে না।’

নিক্সন চৌধুরী বলেন, আমি যদি মনে করি প্রশাসন আমার রাজনীতি করে দেবে সেটি ভুল। প্রশাসন আমাকে এমপি চেয়ারম্যান বানাতে পারবে না। আমাদের নির্বাচিত হতে হবে জনগণের ভোটে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি প্রশাসনও জনগণের জন্য কাজ করে। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তা পারস্পারিক আলাপের মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলতে হবে। একটা ঘরে দুই ভাইয়ের মধ্যেও ঝগড়া হয়। 

সভায় বক্তব্য দেন নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রশাসন গিয়ে আমার নির্বাচন করে দিয়ে আসবে তা আমি ঘুণাক্ষরেও মনে করি না। আমার শক্তি জনগণ। ফরিদপুরে হঠাৎ কি হয়ে গেল। টেন্ডারবাজিতে বিস্মিত হচ্ছি। আমার এলাকার লোক টেন্ডার জমা দিলে ধমক দেওয়া হয়। প্রত্যাহার করে নিতে বলে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নগরকান্দায় গিয়ে কাউকে কাজ করতে দেব না। এই হুমকি ধমকি বন্ধ করুন। শাহদাব আকবর অভিযোগ করে বলেন, ফরিদপুরে টেন্ডার কন্ট্রোল করা হচ্ছে, কাজের ১০ পার্সেন্টিস নেওয়া হচ্ছে।

সভায় জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান তালুকদারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউসার, প্রবীণ শিক্ষক ও সাংবাদিক মো. শাহজাহান, নারী নেত্রী আসনমা আক্তারসহ অনেকে।

ইত্তেফাক/পিও