শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

চিকিৎসায় ক্যানসারে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ রোগী সুস্থ হতে পারে

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৫৮

প্রতি বছরই ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছেই। শিশুদের সাধারণত ব্লাড ক্যানসার বা লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার অন্যান্য ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেশি। এছাড়াও কিডনির টিউমার, লিভারের টিউমার, চোখের টিউমার, ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়। ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যানসারের হিসাব মতে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। দ্রুততম সময়ে শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সুস্থ বা আরোগ্য লাভ করতে পারে। উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উন্নত দেশগুলোতে ক্যানসার থেকে আরোগ্য লাভ করা রোগীর হার প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ। 

গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক শিশু ক্যানসার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ই-ব্লকের দ্বিতীয় তলার মিলনায়তনে শিশু হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে ‘বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ইন চিলড্রেন অ্যান্ড ক্যানসার ভ্যাকসিন ইন চাইল্ডহুড ম্যালিগন্যান্সি’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও ডি-ব্লকের সামনে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা ৩১ শয্যার ওয়ার্ড নিয়ে ১০ হাজার শিশু রোগীকে সেবা দিয়েছেন, যা প্রশংসার দাবি রাখে। উপাচার্য আরো বলেন, বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ক্যানসার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে যাতে করে ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়, সে বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। স্টেমসেল থেরাপি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বাস্তবায়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, হল প্রোভোস্ট অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান, শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার, নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ্ সবুজ প্রমুখসহ ঐ বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিশু হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান। সেমিনারে ‘বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ইন চিলড্রেন’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারায়না হেলথ সিটি ব্যাঙ্গালুরু, ভারত থেকে আগত সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুনিল ভাট এবং ‘ক্যানসার ভ্যাকসিন ইন চাইল্ডহুড ম্যালিগনেন্সি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রেনেসা ইসলাম।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা স্টেমসেল প্রতিস্থাপন হলো একটি প্রক্রিয়া, যা ক্ষতিগ্রস্ত বা রোগাগ্রস্ত বোন ম্যারো, রক্ত সৃষ্টিকারী স্বাস্থ্যকর স্টেমসেল দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন দুই ধরনের—অটোলোগাস ট্রান্সপ্ল্যান্ট (নিজস্ব শরীর থেকে স্টেমসেল সংগ্রহ করে) এবং অ্যালোজেনিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট (দাতার থেকে স্টেমসেল সংগ্রহ করা হয়)। ফিরে আসা লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া, গুরুতর লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া, রিফ্র্যাকটরি হেমাটোলজিক্যাল ম্যালিগনেন্সি, নিউরোব্লাস্টোমাসহ আরো কিছু গুরুতর ক্যানসারের চিকিৎসায় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা স্টেমসেল প্রতিস্থাপন একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। উন্নত বিশ্বে এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে চিকিৎসা সফলতার হার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসা শুরু হয়েছে; কিন্তু তা এখনো পুরোদমে শুরু করা যায়নি বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে।

 

ইত্তেফাক/ইআ