শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এখন তিন বছর মেয়াদি টার্ম লোন দেওয়া হবে

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণের আওতা বাড়লো

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:০০

অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের জন্য পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের আওতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কেবল চলতি মূলধন হিসেবে ঋণ পেতেন উদ্যোক্তারা। তবে এখন থেকে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে চলতি মূলধনের পাশাপাশি তিন বছরমেয়াদি টার্ম লোন পাবেন তারা। এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এর আগে ২০২১ সালে করোনা অতিমারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংক সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ২ হাজার ৫২০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল চালু করে। এ ঋণের অর্থের জোগান দেয় এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। এই তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। তহবিলটির নাম দেওয়া হয় ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্রাইসিস রেসপন্স ফ্যাসিলিটি প্রজেক্ট (সিইসিআরএফপি)’।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অবকাঠামো সংস্কার ও সাজসজ্জার পাশাপাশি সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানের স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সম্পদ ক্রয়ের জন্য পুনঃ অর্থায়নকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রদেয় পুনঃঅর্থায়ন সহায়তা চলতি মূলধনের পরিবর্তে মেয়াদি ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে। যার মেয়াদ হবে তিন বছর। পুনঃ অর্থায়নের তারিখের এক বছর পর থেকে ঋণের টাকা সমন্বয় করা হবে। ঐ সময় নীতিমালায় বলা হয়েছে, সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে, ঐ নিয়মেই এই প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হবে।

সিএমএসএমই চারটি ইংরেজি শব্দের প্রথম অক্ষর। সি হচ্ছে ‘কটেজ’, এম হচ্ছে ‘মাইক্রো’, এস হচ্ছে ‘স্মল’ এবং এম হচ্ছে ‘মিডিয়াম’ এবং ‘ই’-তে এন্টারপ্রাইজ। সিএমএসএমই হলো কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম খাতে নেওয়া উদ্যোগ। শিল্পনীতির আলোকে কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম শিল্প বা উদ্যোগের সংজ্ঞা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করেছে।

কটেজ বা কুটির শিল্প পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্যবিশিষ্ট উদ্যোগ, যার জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য (প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ) ১০ লাখ টাকার কম এবং পারিবারিক সদস্য সমন্বয়ে সর্বোচ্চ জনবল ১৫ জনের বেশি নয়। কুটির শিল্প খাতের একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন। মাইক্রো শিল্পের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা কিংবা শ্রমিক ১৬ থেকে ৩০ জন বা তার চেয়ে কম। সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ টাকার কম কিংবা জনবল ১৫ জনের বেশি নয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পদ ও জনবলের আকার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মতো। তবে বার্ষিক টার্নওভার সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের মাইক্রো শিল্পের একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা এবং সেবা ও ব্যবসা খাতের গ্রাহক সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।

ক্ষুদ্র বা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোগে জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা কিংবা শ্রমিকসংখ্যা ৩১ থেকে ১২০ জন। ব্যবসার ক্ষেত্রে স্থায়ী সম্পদ ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা কিংবা ১৬ থেকে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন কিংবা টার্নওভার ১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকা এমন প্রতিষ্ঠান। সেবামূলক ক্ষুদ্র উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যবসার টার্নওভারের অংশ বাদে বাকিটুকু প্রযোজ্য। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ক্ষুদ্র শিল্পের একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা এবং সেবা ও ব্যবসা খাতের একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।

মাঝারি বা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে মাঝারি উদ্যোগে জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে কিংবা ১২১ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক থাকে। তবে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান/শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১ হাজার জন। সেবামূলক মাঝারি শিল্পে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ২ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা বা শ্রমিকসংখ্যা ৫১ থেকে ১২০ জন। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের মাঝারি শিল্পের গ্রাহক সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি টাকা এবং সেবা খাতের গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।

সিএমএসএমই খাতের সুদের হার সহনশীল মাত্রায় রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। ঋণের জন্য হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক প্রতিবেদন, ব্যবসা নিজ জমিতে হলে দলিল, পর্চা ইত্যাদি এবং বিদ্যুৎ/টেলিফোন বিলের কপি, ভাড়ার চুক্তিনামা, টিআইএন, মজুদ মাল ও মূল্য তালিকা, ঋণের আবেদনকারী এবং গ্যারান্টার উভয়ের পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং গ্যারান্টার ব্যবসায়ী হলে তার ট্রেড লাইসেন্সের কপি ও চলমান ব্যবসা হলে গত এক থেকে তিন বছরের বিক্রয় ও আর্থিক বিবরণী; প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন এবং মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস, ভ্যাট সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) এবং আইআরসি ও আইআরই সার্টিফিকেট (আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা) প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়ন স্কিমের আওতায় নারী উদ্যোক্তারা ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে সহায়ক জামানত ছাড়া ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। এ ছাড়া কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের আওতায় নতুন উদ্যোক্তারা জামানতবিহীন ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণ পেতে পারেন।

ইত্তেফাক/এমএএম