কয়েক বছর ধরেই জাতীয় দলের বাইরে ইমরুল কায়েস। তাই বরাবরই সব আলোচনার আড়ালে চলে যান তিনি। ঢাকা পড়ে থাকে তার অর্জন। তবে জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও তিনি নিয়মিত খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন ঘরোয়া লিগ এবং বিপিএলে। শুধু যে খেলছেন তা কিন্তু নয়, বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগে রেকর্ড অধিনায়ক হিসেবে নিজের দলকে তিনটি ট্রফিও এনে দিয়েছেন ইমরুল। এছাড়া নির্দিষ্ট একটি দলের খেলোয়াড় হিসেবেও সবচেয়ে বেশি (৪ বার) শিরোপা জেতার রেকর্ডও তারই দখলে।
গত বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলের নবম আসরের ফাইনালে সিলেটকে ৭ উইকেটে হারিয়ে চতুর্থ বারের মতো শিরোপা জিতে ইমরুল কায়েসের দল কুমিল্লা। বিপিএলে কুমিল্লাই একমাত্র দল যারা কিনা ২০১৫ সাল থেকে একই মালিকের অধীনে এবং নামে খেলছে প্রতি আসর। এছাড়া প্রায় প্রতি আসরেই দলগুলোর নাম এবং পরিবর্তন হয়ে থাকে। দলটি যেমন নিজেদের নাম এবং মালিক ঠিক রেখেছে তেমনি ঠিক রেখেছে টুর্নামেন্টে নিজেদের দাপটও। কেননা টুর্নামেন্টটির এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া ৯ আসরের মধ্যে চারবারই নিজেদের ঘরে তুলেছে ট্রফি।
এদিকে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের কোচ সালাউদ্দিন, অধিনায়ক ইমরুল কায়েস এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিক নাফিসা কামাল। এ সময় একে একে তারা তিন জনই কথা বলেন সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে। জবাব দেন বিভিন্ন প্রশ্নের, প্রকাশ করে নিজেদের ট্রফি জয়ের অনুভূতিও। অধিনায়ক ইমরুল কায়েস নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন। সে সময় হ্যাটট্রিক হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পরও যে দলের ভেতর বিশ্বাসটা ছিল তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় বলি, কুমিল্লায় খেললে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে আমার ভেতর। কুমিল্লা একটি ব্র্যান্ড। অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি আসে, ভালো করে বা খারাপ করে, এরপর তারা ছেড়ে দেয়। আশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু এরা (কুমিল্লা) এক বছর ধরে যেভাবে পরিকল্পনা করে যে পরবর্তী ভিশন কী হবে, স্যার (কোচ) যেটা বললেন, আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দল গড়ি এবং আমাদের লক্ষ্য এরকম থাকে যে আমরা রানার্স আপ হওয়ার জন্য দল গড়ি না।’
২০১৯ সালে কুমিল্লা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান ইমরুল কায়েস তবে মূল অধিনায়কের দায়িত্ব সে সময় তিনি পান না। তখন দলটির অধিনায়ক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। তবে ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্টের মাঝপথে স্মিথ দেশে ফিরে যাওয়ায় নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব বর্তায় তার কাঁধে। এ প্রসঙ্গে ইমরুল বলেন, ‘আমি যখন প্রথম অধিনায়কত্ব করি কুমিল্লাতে, স্টিভেন স্মিথ অধিনায়ক ছিল, সে চলে গেল। তারপর আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে যে আমি ‘অ্যাক্টিং ক্যাপ্টেন’। তবে সবকিছু তো আসলে বাইরে থেকে প্রকাশ করা যায় না। মাঠেই করে দেখাতে হয়।’
অধিনায়ক হিসেবে এবার ইমরুল ব্যাট হাতে দলের জন্য আহামরি কোনো পারফরম্যান্স করেননি। ২০২৩ বিপিএলে তিনি ১৩ ইনিংস খেলে মাত্র করেছেন ২১৮ রান, ১৬.৭৬ গড়ে, সর্বোচ্চ ইনিংস ৩৫ রানের। এছাড়া জয়ের রাতেও তিনি ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন। ওপেনার সুনীল নারিন আউট হলে তিনে নেমে খুব দ্রুতই তাকে ফিরতে হয়। এদিন ৩ বল খেলে রান করেন মাত্র ২। তবুও দিন শেষে তার দল সফল। টানা দ্বিতীয় বার এবং বিপিএল আসরে চতুর্থ বার ট্রফি জয়। দলের এমন সফল হওয়ার কারণ জানিয়ে এ অধিনায়ক বলেন, ‘আমি স্যারের (কুমিল্লা কোচ সালাউদ্দিন) সঙ্গে যেভাবে আলোচনা করি, আমাদের খেলাটা নিয়ে, কুমিল্লার ভালোর জন্য। সত্যি বলতে, ঘরোয়া ক্রিকেটে যখনই খেলি না কেন, অনেক পরিকল্পনা করে, চিন্তা-ভাবনা করে ক্রিকেট খেলি। এটার জন্য হয়তো সফল হই।’
এ সময় কথা বলেন চেয়ারপারসন নাফিসা কামালও। তিনি জানান আগামী আসরের দল গোছানোর কাজ তারা ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। নাফিসা বলেন, ‘আজকেই (গত বৃহস্পতিবার) আমি আগামী বিপিএলের জন্য দুজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেছি। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয়েছে। আমাদের কাজ এখনই শুরু হয়ে গেছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ। আজকে থেকেই আমাদের পরবর্তী বছরের পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে।’
আরো বলেন, ‘এই বিপিএলে আমরা দেখেছি সব দল, ধারাবাহিকভাবে বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে ভুগেছে। ফলে মনোযোগটা খেলার চেয়ে চলে গেছে বাইরে। বিদেশি খেলোয়াড়েরা প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেছে। এই ক্ষেত্রে আমরা প্রথম থেকেই জানতাম কোন সময় আমাদের কোন খেলোয়াড় আসবে-যাবে। সে জন্য আমাদের চিন্তাটা অন্য দিকে যায়নি। খেলার মধ্যেই ছিল। বাইরের বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়নি।’