শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার 

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৩৭

২১ ফেব্রুয়ারি। আর মাত্র ১ দিন পরেই মহান শহীদ দিবস। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সেই ভয়াল ইতিহাস প্রতিবছর ঘটা করে পালন করা হলেও সারাবছর সেইসব বীর শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারদের যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করা হয় না। 

গাংনী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে পারে না। অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু জাতীয় পতাকা তুলে দায়িত্ব পালন করেন। কোনো আলোচনা না করায় মহান ভাষা আন্দোলন কিংবা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে কিছুই জানে না শিক্ষার্থীরা।

গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ৬৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৮টি মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ৯টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। 

অপরদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৬১টি সরকারি, ৩টি রেজিঃ, একটি এবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং ৬০টি কেজি স্কুল রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অমর একুশে, ভাষা আন্দোলন কিংবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে তেমন কিছুই বলতে পারেনি। আবার শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়েও শহীদদের সম্মান জানাতে পারে না। 

উপজেলা সদর ছাড়া গ্রামাঞ্চলের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে সেগুলো রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একুশে ফেব্রুয়ারির দিন তেমন কোনো কর্মসূচি থাকে না। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মাঝে মধ্যে ফুল দিয়ে থাকে। এখানে ভাষা আন্দোলন বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কোনো আলোচনা সভাও হয় না। শুধু পতাকা উত্তোলন করা হয়। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্পর্কে তেমন কিছু শিখতে বা জানতে পারছে না।

নওদাপাড়া বিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র মাসুদ জানান, প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রভাতফেরি ও শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। শহীদ মিনার না থাকায় ফুল দিয়ে সম্মান জানাতে পারেনা শিক্ষার্থীরা।

শিমুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম জানায়, ওই ভোরে স্যাররা পতাকা তুলতে বলে। তাই পতাকা তুলে বাড়ি আসি। কোনো আলোচনা কিংবা মিলাদ হয় না। বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে ফুল দিয়ে শহীদদের সম্মান জানানো যেত।

সিএফএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল হেলাল জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিৎ। এতে করে সবাই শহীদদের প্রতি যেমন সম্মান জানাতে পারে তেমনি শিক্ষার্থীরা এ দিবসটির তাৎপর্য বুঝতে পারবে।

গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাসিরউদ্দীন ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার জানান, স্থানীয়ভাবে অর্থব্যয় করে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব না। সরকারী উদ্যোগে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো উচিৎ। এ দিবস কি ও তাৎপর্য শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভার করার জন্য অফিস থেকে চিঠি দেওয়া হয়ে থাকে।  

ইত্তেফাক/পিও