শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বিশ্বযুদ্ধ বাধাতে চায় পশ্চিমারা: পুতিন

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৩০

প্রায় এক বছর আগে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। শুক্রবার সেই হামলার প্রথম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এই সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের দায়ভার পশ্চিমাদের ওপর চাপালেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার অভিযোগ, বিশ্বযুদ্ধ বাধাতে চায় পশ্চিমা বিশ্ব। গতকাল মঙ্গলবার স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র দেশগুলো বিশ্বকে বিভ্রান্ত করছে। তার এই ভাষণের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো।

প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, পশ্চিমারা যুদ্ধের বিস্তার ঘটাচ্ছে। বৈশ্বিক সংঘাতের মঞ্চে মস্কোকে পরাজিত করতে পারবে এমনটি একটি ভুল ধারণা নিয়ে তারা এটি করছে। এই সংঘাতের জন্য তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে দায়ী করে বলেন, ইউক্রেনকে তারা রুশবিরোধী দেশে পরিণত করতে চাইছে। তিনি আরো বলেছেন, রাশিয়ার অস্তিত্ব সংকটের মুখে।

পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ এবং সেনা কমান্ডারদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি ছিল রাশিয়া। কিন্তু পশ্চিমের দেশগুলো সর্বদাই অসৎ জবাব দিয়েছে। পুতিনের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগী দেশগুলো সর্বদাই বিশ্বকে বিভ্রান্ত করেছে। স্থানীয় একটি সমস্যাকে বৈশ্বিক করে তুলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নাম উল্লেখ না করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, যত বেশি অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করা হবে, আমাদেরও তত কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। ভাষণে তিনি বলেন, সতর্কতার সঙ্গে আমরা একটি সমস্যা সমাধানের পথে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইউক্রেন পাশ্চাত্যের দাসে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনে সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমারা হামলা করতে চায় বলেও উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি দিয়ে ইউক্রেনকে দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কি যত না তার জাতীয় স্বার্থ দেখছেন, তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তার পাশ্চাত্যের মিত্রদের। রাশিয়ার পতাকা শোভিত মঞ্চের মধ্যের ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন পুতিন। দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক অভিজাতদের সামনে রেখে দেওয়া এই বক্তব্যে তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছে তা সাবধানে ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সমাধান করা হবে। পশ্চিমাদের বৈশ্বিক সংঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে পুতিন বলেছেন, রাশিয়াকে এই যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। যুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট তিনি অনুধাবন করেন।

গত দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট পুতিন কোনো স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তার এই ভাষণের সময় বার বার পেছানো হয়। প্রেসিডেন্ট পুতিন দাবি করেন, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব দনবাস অঞ্চলের সংঘাত শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, শান্তির ব্যাপারে পশ্চিমাদের যে অঙ্গীকার, তা আসলে এক ধরনের প্রতারণা। তিনি আরো অভিযোগ করেন যে কিয়েভ সরকার জীবাণু এবং পরমাণু অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এটি সমাধানের জন্য সবরকমের চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু আমাদের পেছনে ভিন্ন খেলা চলছিল। পশ্চিমারা আসলে সময়ক্ষেপণ করছিল।’

পুতিন বলেন, ইউক্রেনের জনগণ কিয়েভের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী ও তাদের পশ্চিমা তাবেদারদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে জয়-পরাজয় এখন রাশিয়ার অস্তিত্বের প্রশ্ন। যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন পুতিন। তার মতে, রুশ সমাজকে বিভক্ত করতে পশ্চিমাদের যে চেষ্টা, তার সামনে কখনো নতি স্বীকার করবে না রাশিয়া। আর ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে বেশির ভাগ রুশ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে।

  • পশ্চিমাদের নিন্দা

প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভাষণের পর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ার ওপর কেউ হামলা করছে না। এটা একটা বিমূর্ত বিষয় যে রাশিয়া ইউক্রেন বা অন্য কারো হুমকির মুখে আছে। পুতিনের ভাষণের নিন্দা জানিয়ে ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ গতানুগতিক বক্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর কেউ হামলা করছে না। রাশিয়া আগ্রাসনকারী। —আলজাজিরা ও সিএনএন

ইত্তেফাক/ইআ