বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আউয়াল কমিশনের এক বছর, আস্থা অর্জনের চেষ্টায় কতটুকু সফল ইসি

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:০১

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব গ্রহণের বছরপূর্তি আজ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন অনুষ্ঠিত হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দায়িত্বগ্রহণের একবছর অতিবাহিত হয়েছে। আস্থা অর্জনের বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান কমিশন। কিন্তু তারা কতটা সফল হয়েছে তা বলা কঠিন। কেননা ইতিমধ্যে বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে পারেনি বর্তমান কমিশন। তাছাড়া এই কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।

রাজনৈতিকভাবে সমাধানযোগ্য কোনো বিষয় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে প্রত্যাশা করাও সমীচীন নয় বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। সাংবিধানিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব যতটুকু তার শতভাগ তারা পালন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে ইসি আহসান হাবিব বলেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছি; এটা করেই যাব। তিনি বলেন, আলাদা কোনো চ্যালেঞ্জ নয়, প্রতিটি নির্বাচন যেভাবে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করেছি; একইভাবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও করব ইনশাল্লাহ। 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর পরপর দুটি আলোচিত-সমালোচিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থায় আস্থা-অনাস্থা নিয়ে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বগ্রহণ করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন ও সর্বশেষ কে এম নূরুল হুদা কমিশনের রেখে যাওয়া সংকট নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনকে।  

গত বছরের ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রথমবারের মতো আইন প্রণয়ন করে সরকার। আইনের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন ইসি।

আস্থা অর্জনে সংলাপ :নির্বাচন কমিশনে যোগ দিয়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংলাপ শুরু করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিয়ে ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ করেন তারা। ধারাবাহিকভাবে গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক সংস্থা, এনজিও প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করেন। সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘সমঝোতা জরুরি’ বলে মন্তব্য করেন। 

 ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট, অর্থসংকটে পিছু হটা : সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি উপেক্ষা করে গত ২৩ আগস্ট সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কমিশন। ফলে নতুন করে ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে কমিশন। যদিও অর্থসংকটে এই মুহূর্তে নতুন প্রকল্প গ্রহণে সরকার থেকে না করে দেওয়া হয়। ফলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণে পিছু হটে ইসি।

ইসির প্রথম পরীক্ষা কুমিল্লায় কেমন ছিল : ইসির দায়িত্ব নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভোটের তপশীল দেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। প্রথম পরীক্ষায় কুমিল্লা সিটির পাশাপাশি ১৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদ, পাঁচটি পৌরসভা এবং চারটি উপজেলা পরিষদে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে বলে দাবি আউয়াল কমিশনের। প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সশরীরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোটের মাঠ পরিদর্শনে আসেন সিইসি। 

আলোচিত গাইবান্ধার উপনির্বাচন :গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের সময় সিসি ক্যামেরায় ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পেয়ে একে একে ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে কমিশন। আর একটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই অবস্থায় নির্বাচনের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেন সিইসি। এর মাধ্যমে নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথা জানান দেয় আউয়াল কমিশন। শাস্তি পাওয়াদের তালিকায় আছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রিজাইডিং ও পুলিশ কর্মকর্তারা।

ইসির এক বছরের মূল্যায়ন :এক বছরের সার্বিক মূল্যায়নে ইসি আহসান হাবিব বলেন, আমি বরারবই বলেছি, দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক বিভেদ আর প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হয়েছে। সব দলের প্রতি আহ্বান অব্যাহত থাকবে, ভোটে অংশ নিন। কমিশনের একার পক্ষে সব সম্ভব হবে না; সকলের সহযোগিতাও দরকার। আমাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রমাণ দিয়েছি, আস্থা অর্জনে এগিয়ে গেছি।

 

ইত্তেফাক/ইআ