শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কারাগারে ৬৩ নারী ফাঁসির আসামি

আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:০১

পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন এক নারী। সেখান থেকে পারিবারিক বিরোধ। সেই বিরোধের জেরে দুই সন্তানকে হত্যা করেন ইয়াসমিন নামে এক নারী। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বিচার শেষে ঐ নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক রোজিনা খান। শুধু ইয়াসমিনই নয়—হত্যা, মাদকসহ নানা গুরুতর অপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন ৬৩ নারী। এই ৬৩ নারীসহ কারাগারে মোট মৃত্যুদপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন ২ হাজার ১৬২ জন। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দির সংখ্যা ২ হাজার ৯৯ জন। গতকাল সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন দাখিল করেন কারা কর্তৃপক্ষ।

বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামি মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হলে তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়। কনডেম সেল থেকে ঐ আসামি ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। সেই আপিল নিষ্পত্তির পর যদি উচ্চ আদালত ফাঁসি বহাল রাখেন তাহলে তাকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে হয়। সেই আপিলেও সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকলে করতে হয় রিভিউ পিটিশন। এসব আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতেই গড়ে ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লেগে যায় বলে আদালতকে জানান রিটকারী পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির। তিনি বলেন, এই দীর্ঘ সময় একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে থাকতে হয়।

দীর্ঘ সময় একজন আসামিকে কনডেমে সেলে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত। এটা তো মানবিক ইস্যু।

এদিকে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁসির আসামিদের জন্য কারাগারে ২ হাজার ৬৫৭টি কনডেম সেল রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫১২টি পুরুষ সেল এবং ১৪৫টি নারী সেল রয়েছে। সর্বোচ্চ ৯৫১ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। এই কারাগারে সেলের সংখ্যা ১ হাজার। নারী বন্দির জন্য কোনো সেল এই কারাগারে নেই। কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে সেল রয়েছে ১২টি। সেখানে বন্দি রয়েছেন ৩০ নারী ফাঁসির আসামি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পুরুষ ফাঁসির আসামি রয়েছেন ৮১ জন। কনডেম সেল রয়েছে ৪৪৮টি। এছাড়া বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে ৭৮, খুলনা জেলা কারাগারে ৪২, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ১০৪, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ৯৩, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৮৯, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ৯৮, দিনাজপুর জেলা কারাগারে ৫৯, রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪৩, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৪৭, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ ৭৫, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ ১১৭ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন।

বন্দিদের জন্য যেসব সুবিধা প্রদান : খাবার, পোশাক ছাড়াও কারা বিধি মোতাবেক আত্মীয়স্বজন ও আইনজীবীদের সাক্ষাৎ, ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা, বইপুস্তক ও পত্রপত্রিকা পড়ার সুযোগ, ধূমপায়ীদের বিড়ি/সিগারেট প্রদান, সেলসংলগ্ন আঙিনায় গোসল ও শরীরচর্চার সুযোগ দেওয়া হয় ফাঁসির আসামিদের।

আদালতের আদেশ : গতকাল রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির আদালতে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ ছিল কনডেম সেলের ভেতরের সুযোগ-সুবিধা কী—সেই বিষয়ে তথ্য দেওয়ার। কিন্তু এই রিপোর্টে সেটা নেই। এরপরই কনডেম সেলের আয়তন, ভেতরের পরিবেশ, ভেনটিলেশন সিস্টেমসহ কী কী সুবিধা রয়েছে—তা ৪ এপ্রিলের মধ্যে আদালতকে জানাতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ার শাকির।

 

ইত্তেফাক/ইআ