বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রস্তুতি নেই বাংলাদেশের

ভারতে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, ১১ জনের মৃত্যু

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৩, ০১:০৪

ভারতে অ্যাডিনো ভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে যখন মাস্ক পরার প্রবণতা কমেছে, স্কুল-কলেজ খোলার পাশাপাশি সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে, সেসময় জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে ভারতের কলকাতার হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে শিশুদের, যাদের বেশির ভাগই আক্রান্ত অ্যাডিনো ভাইরাসে। ইতিমধ্যে অ্যাডিনো ভাইরাসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোভিডের মতো উপসর্গ অ্যাডিনো ভাইরাসের। অর্থাৎ সর্দি-কাশি-জ্বর। বাংলাদেশে অ্যাডিনো ভাইরাস মোকাবিলায় নেই কোনো প্রস্তুতি। যে কোনো মুহূর্তে দেশে অ্যাডিনো ভাইরাস ব্যাপক হারে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

কলকাতার হাসপাতালে আসা শিশুদের শতকরা ৯০ জনেরই শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশই ভাইরাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এবং তাদের মধ্যে বেশির ভাগ আবার অ্যাডিনো ভাইরাসের শিকার। কলকাতা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা ছাড়াও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে শিশু রোগীদের চাপ দেখা যাচ্ছে। সংকটাপন্নদের ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে।

২০১৮-১৯ সালের পর এবার অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণকে ভয়াবহ বলছেন চিকিৎসকরা। এর পেছনে শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতিকে কারণ মনে করছেন তারা। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, যে কোনো বয়সি মানুষ অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। জ্বর, সর্দি, কাশি ছাড়াও ফুসফুসে ইনফেকশন হতে পারে। বড়রা শ্বাসনালির উপরি ভাগে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মিটফোড হাসপাতালসহ রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অ্যাডিনো ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছেন।

 ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে প্রচুর রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে আসছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় কারা অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত সেটি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তবে কোভিডের মতো উপসর্গ নিয়েই রোগীরা হাসপাতালে আসছেন।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, অ্যাডিনো ভাইরাসের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশে যেহেতু ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, তাই আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। এদিকে আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, বিএসএমএমইউ ও সিএমএইচ- এই চার জায়গায় অ্যাডিনো ভাইরাস পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। তবে কেউই পরীক্ষা করছে না।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, অন্যান্য ভাইরাসের মতো অ্যাডিনো ভাইরাসের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা উচিত। কারণ এখন অ্যাডিনো ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আসছেন। এখন নাই নাই করতে থাকলে দেখা যাবে হঠাৎ করে দেশে অ্যাডিনো ভাইরাস ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। তাই সময় থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, অ্যাডিনো ভাইরাসের বিষয়টি আমাদের কাছে কেউ এখনো জানায়নি। এ জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। নিজ উদ্যোগে অ্যাডিনো ভাইরাস সার্ভিলেন্সের আওতায় আনার উদ্যোগ নেবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে দেখা যাবে। 

যেভাবে ছড়ায়: যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্তরা মৃদু থেকে গুরুতর অসুস্থ হতে পারে, তবে মারাত্মক অসুস্থতার প্রবণতা কম দেখা যায়। দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অথবা যাদের আগে থেকেই শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ও হৃদরোগ রয়েছে তাদের এ ভাইরাসে মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো— সাধারণ সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা, তীব্র ব্রংকাইটিস,  নিউমোনিয়া, চোখ-ওঠা রোগ বা কনজাঙ্কটিভাইটিস,  পাকস্থলী বা অন্ত্রের প্রদাহ, যা ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব ও পেটে ব্যথা সৃষ্টি করে। এছাড়া মূত্রাশয়ে প্রদাহ বা সংক্রমণ, নিউরোলজিক ডিজিস যেমন, ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা হতে পারে, তবে এটি খুব সাধারণ লক্ষণ নয়। অ্যাডিনো ভাইরাস আক্রান্ত একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্পর্শ ও করমর্দনের মতো শারীরিক সংস্পর্শ ছড়াতে পারে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসের সাহায্যে ছড়াতে পারে। অ্যাডিনো ভাইরাস রয়েছে এমন কিছুতে স্পর্শের পর হাত ভালোভাবে না ধুয়ে নাক-মুখ ও চোখে স্পর্শ করলে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত শিশুদের পয়োঃবর্জ্য থেকে ছড়াতে পারে। যেমন—ডায়াপার পরিবর্তনের সময় এই ঝুঁকি থাকে।

প্রতিরোধের উপায় : অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে কিছু উপায় তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে হাত ধোয়া, শিশুদেরও এই অভ্যাস তৈরি করা। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা। অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। নিজে আক্রান্ত হলে বাড়িতে অবস্থান করা। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ আটকানো। অন্যের ব্যবহৃত জিনিস যেমন, কাপ ও খাবাবের থালা-বাটি ব্যবহার না করা। আক্রান্ত হলে চুম্বন থেকে বিরত থাকা।

চিকিৎসা :অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা বা ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ নেই। আক্রান্তদের হাসপাতালে রেখে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হতে পারে। বেশির ভাগ অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ মৃদু হয় এবং এ থেকে মুক্তি পেতে কেবল বিশ্রাম, পরিচর্যা প্রয়োজন হতে পারে। সেই সঙ্গে উপসর্গগুলো সারাতে জ্বরের ওষুধ কাজে লাগতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, অ্যাডিনো ভাইরাসের টাইপ-৪ এবং টাইপ-৭ এর ভ্যাকসিন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে; তবে এ দুটি ধরনে আক্রান্ত বা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদেরই কেবল ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন