শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হাইপারসনিক মিসাইল দিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৩, ১১:২২

ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়া আবারও ব্যাপক মিসাইল হামলা চালিয়েছে যাতে দেশটির বিভিন্ন অংশে বাড়িঘর ও জ্বালানি অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সমন্বিত মিসাইল হামলা। 

বলা হচ্ছে অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্রের সাহায্যে এসব হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে হাইপারসনিক মিসাইলও রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া এর আগে কখনও কিনঝাল হাইপারসনিক মিসাইল নিক্ষেপ করেনি। এটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়া আবারও ব্যাপক মিসাইল হামলা চালিয়েছে যাতে দেশটির বিভিন্ন অংশে বাড়িঘর ও জ্বালানি অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।

হামলার পর রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকফ জানিয়েছেন, দীর্ঘ পাল্লার অত্যন্ত নিখুঁত অস্ত্র, যার মধ্যে কিনঝাল হাইপারসনিক মিসাইলও রয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাত করেছে।

ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সর্বশেষ এই হামলায় বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে। এরকম আগে কখনও হয়নি বলে জানান তিনি। বায়ুমণ্ডলের উচ্চতম স্তর দিয়ে এই মিসাইল শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ দ্রুত গতিতে চলে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকফ

রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্তত আরও পাঁচটি দেশ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরির চেষ্টা করছে। ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার বর্ষপূর্তির দুই সপ্তাহ পরে এই হামলা চালানো হলো।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ৯০টির মতো মিসাইল ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ড্রোনের সংখ্যা আটটি এবং চারটি ড্রোন ইরানের তৈরি। দেশটির ২৭টি অঞ্চলের অন্তত ১০টিতে বুধবার (৮ মার্চ) রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে এসব আক্রমণ চালানো হয়।

রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্তত আরও পাঁচটি দেশ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরির চেষ্টা করছে।

রাশিয়ার ছোড়া এসব মিসাইল ও ড্রোনের ৩৪টিকে গুলি করে আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বলে ইউক্রেন দাবি করছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সর্বশেষ এই হামলাকে মস্কোর 'কদর্য কৌশল' বলে উল্লেখ করেছেন। ইউক্রেনের জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য শত্রুরা ৮১টি মিসাইল ছুড়ে তারা তাদের কদর্য কৌশলে ফিরে গেছে বলে জানান তিনি।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছেন, এই হামলার পেছনে কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই। এটা রাশিয়ার বর্বরতা। এই হামলার ফলে ইউরোপের সর্ববৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিশায় বিদ্যুৎ নেই। বিভিন্ন শহরেও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি।

রাশিয়ার ছোড়া এসব মিসাইল ও ড্রোনের ৩৪টিকে গুলি করে আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বলে ইউক্রেন দাবি করছে।

তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, 'এনিয়ে ষষ্ঠবারের মতো আমি আবারও বলছি, ষষ্ঠবার এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।'

গ্রোসি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'আমরা কী করছি? আমরা কীভাবে এখানে বসে আছি এবং ঘটনা ঘটতে দিচ্ছি? এভাবে তো চলতে পারে না। এ রকম যদি আমরা বার বার হতে দেই, ভাগ্য হয়তো একসময় ফুরিয়ে যাবে।'

পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাপোরিশা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখন ডিজেল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এই কেন্দ্রে যে পরিমাণ ডিজেল মজুদ আছে তা দিয়ে আরও ১০ দিন চলতে পারে। ইউক্রেনের জাপোরিশা অঞ্চলের কিছু অংশ এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে। 

এই অঞ্চলে রাশিয়ার নিযুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেন সেখানে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এই ঘটনাকে তারা 'উস্কানিমূলক' বলে উল্লেখ করেছেন। রাজধানী কিয়েভ, উত্তরের খারকিভ ও দক্ষিণের ওডেসার মতো বড় বড় শহরেরও অনেক জায়গায় এখন বিদ্যুৎ নেই।

জাপোরিশা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখন ডিজেল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানিয়েছেন, তার শহরের ৪০ শতাংশ বাসিন্দাদের বাড়িতে এখন হিটিং নেই। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে মেরামতের কাজ চলছে। কিয়েভের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে তারা সাত ঘণ্টা ধরে বিমান হামলার সতর্ক সঙ্কেত শুনেছেন।

রাজধানী উপকণ্ঠে স্বামী ও তিন মাস বয়সী শিশু এবং তাদের বাবা মা ও দাদা দাদীকে নিয়ে থাকেন ইরিনা নেমিরোভিচ। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, 'আমরা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেছি। কিন্তু আমরা জানি না এগুলো কি বিমান বিধ্বংসী সিস্টেমের না কি মিসাইলের আঘাতের। কিন্তু খুব জোরে জোরে বিস্ফোরণ হচ্ছিল।'

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে বলা হচ্ছে এসব হামলায় কমপক্ষে ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পশ্চিমাঞ্চলীয় লাভিভে মিসাইলের আঘাতে বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখানে আরও অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খেরসন ও দিনিপ্রপেত্রোভস্ক শহরেও রাশিয়ার গোলাবর্ষণে আরও তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।

ইত্তেফাক/ডিএস