মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ডিবির দাবি ৯ কোটি টাকা উদ্ধার, গুনে দেখা গেলো ৩ কোটি ৮৯ লাখ

ব্যাংকের টাকা ছিনতাই: উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্ক নিয়ে বিভ্রান্তি

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:৫৭

বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গাড়ি থেকে ছিনতাই হয় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। টাকার কিছু অংশ উদ্ধারের পর ডিবি পুলিশ ঐ দিনই জানায়, তারা প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। তবে টাকা গণনার পর থানা পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া টাকার প্রকৃত পরিমাণ ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অল্প সময়ের ব্যবধানে উদ্ধার করা টাকার পরিমাণ কমে যাওয়ায় তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া টাকার বিষয় ডিবি বলছে, টাকার আসল পরিমাণ জানে উত্তরা বিভাগ পুলিশ। অন্যদিকে উত্তরা বিভাগ পুলিশ বলছে, টাকা যেহেতু ডিবি পুলিশ উদ্ধার করেছে, তাই তারাই জানে আসলে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসের বাদী হয়ে ডিএমপির তুরাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ডিএমপি উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) বদরুল হাসান জানান, ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর উত্তরা থেকে বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গাড়ি থেকে প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর তাৎক্ষনিক অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে উত্তরা এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে বেশির ভাগ টাকা উদ্ধারের কথা জানায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় যে গাড়ি নিয়ে ছিনতাই করা হয় ঐ গাড়ির চালককে আটক করা হয়। পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত জনকে আটক করে পুলিশ।

রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, ‘ঘটনার ১০ ঘণ্টার মধ্যে ৯ কোটির বেশি টাকা উদ্ধার করেছি। বড় অংশই উদ্ধার করা হয়েছে।’

পরে রাতে টাকা বহনকারী প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সামনে উদ্ধার হওয়া তিনটি ট্রাংক খুলে ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা পায় থানা পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানায়, খোয়া যাওয়া চারটি ট্রাংকের মধ্যে তিনটি ট্রাংক উদ্ধারের পর টাকা না গুনেই আনুমানিক ৯ কোটি উদ্ধারের কথা জানিয়ে দেয় ডিবি। পরে রাতে থানায় নিয়ে গণনার পর ট্রাংকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মিলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এত মোটা অঙ্কের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পর আমাদের ডিবি পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমে কাজ শুরু করে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল টাকাসহ ছিনতাইকারীদের ধরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাই হওয়া চারটি ট্রাংকের মধ্যে তিনটি উদ্ধার করা হয়। ট্রাংক তিনটি উদ্ধারের পরপরই ডিএমপির উত্তরা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করি।

তিনি বলেন, আমরা যখন গাড়িসহ (টাকা) উদ্ধার করেছি, তখন ট্রাংকগুলো লক ছিল। সাংবাদিকদেরও লক অবস্থায় দেখানো হয়েছে। ট্রাংকের চাবি ছিল সিকিউরিটি কোম্পানির কাছে। ট্রাংকগুলো তুরাগ থানায় নিয়ে থানা পুলিশ ও সিকিউরিটি কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে টাকা গোনা হয়। আমরা ট্রাংক উদ্ধার করেছি, কিন্তু টাকা গুনিনি। বৃহস্পতিবার আনুমানিক সংখ্যা বলা হয়েছিল ৯ কোটি টাকা থাকতে পারে। তাই টাকার সঠিক পরিমাণ উত্তরা বিভাগের পুলিশ বলতে পারবে।

এদিকে টাকার পরিমাণ নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) বদরুল হাসান বলেন, টাকা উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। তাই এ বিষয়ে তারাই বলতে পারবেন।

অপরদিকে মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, যে টাকাগুলো ডিবি পুলিশ উদ্ধার করেছে তা এখনো আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। উদ্ধার হওয়া টাকা থানায় রয়েছে। তবে পুলিশ গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমাদের সামনে টাকাগুলো গুনে ছিল। পুলিশের গণনা অনুযায়ী  প্রাথমিকভাবে উদ্ধার হওয়ার টাকার পরিমাণ ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা?।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তিনটি ট্রাংকের একটি খালি ছিল। বাকি দুটি ট্রাংকে ছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, সোয়া ১১ কোটি টাকাভর্তি চারটি ট্রাংক ছিনতাই হয়েছে। যেহেতু তিনটি ট্রাংক উদ্ধার হয়েছে, তাই বেশির ভাগ টাকা অর্থাৎ ধারণা করেই তাৎক্ষণিক প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানান ডিবি প্রধান।

ইত্তেফাক/এমএএম