বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাজারদর

রমজানের আগেই পণ্যের বাড়তি দামের চাপ

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৩, ০৩:০০

আর মাত্র দুই সপ্তাহ পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। কিন্তু রমজানের আগেই দফায় দফায় বাড়ছে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ, আটার দাম আরও এক দফা বেড়েছে। এছাড়া আগে থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল, ময়দা, চিনি, ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্য।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম ১০ শতাংশ থেকে  ৯০ দশমিক ৯১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে এবার নিত্যপণ্যের বাড়তি দরের চাপ নিয়েই ভোক্তাদের রমজান শুরু করতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর ও কাওরানবাজারসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। চাহিদা অনুযায়ী এসব পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও গত কিছুদিন ধরেই দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে এসব পণ্যের দাম। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষকে।

ভোক্তারা জানিয়েছেন, যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে রমজানে তাদের বিপাকে পড়তে হবে। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শবেবরাতের আগেও এসব মাংসের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কম ছিল। এ হিসেবে গত তিন-চার দিনের ব্যবধানে ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছেন। এছাড়া, গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, খোলা সাদা আটার কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা ও প্যাকেট আটা ২ টাকা বেড়ে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি ডিম ২ টাকা বেড়ে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা হালিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রমজানে ইফতারি তৈরিতে ব্যবহৃত ছোলা, অ্যাংকর ডাল, বেসন, চিনির দামও ইতিমধ্যে বেড়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনিতে ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকা, ছোলায় ৫ টাকা বেড়ে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও বেসন ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বাজারে অন্যান্য পণ্যের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৭০ থেকে ১৭২ টাকা, ১ লিটারের সয়াবিনের বোতল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এই দর সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি। সরকার প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল ১১৭ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করেছে।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে অ্যাংকর ডালের দাম ৩৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ছোলা ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, মসুর ডাল ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, আলু ১০ শতাংশ, দেশি রসুন ৯০ দশমিক ৯১ শতাংশ, শুকনা মরিচ ৩৪ দশমিক ৯২ শতাংশ, আমদানিকৃত হলুদ ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, মানভেদে আদা ২৬ থেকে ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ, জিরা ৬৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগি ৫৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, চিনি ৪২ দশমিক ৪১ শতাংশ, খেজুর ২০ শতাংশ দাম বেড়েছে। ফলে এবার ভোক্তাদের বিভিন্ন পণ্যের বাড়তি দামের চাপ নিয়ে রমজান শুরু করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে আমরা কাজ করছি। এজন্য নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করছি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেন না। এ বিষয়ে এবার আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। রমজানে বাজার অভিযান জোরদার করা হবে। কোনো কারণ ছাড়া দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পাশাপাশি ভোক্তাদের তিনি প্রয়োজনের বেশি পণ্য না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন।

ইত্তেফাক/এমএএম