শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

৪৯ শতাংশ নারীর নিজস্ব মোবাইল ফোন নেই: বিবিএস

প্রযুক্তি সুবিধার অভাবে পিছিয়ে পড়ছে নারী

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩০

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬২)। তিনি বয়স্কভাতা পান ‘নগদ’ অ্যাপের মাধ্যমে, মোবাইল নম্বরে আসে সেই টাকা। কিন্তু সেই বয়স্কভাতার টাকা তিনি প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাবে নিজে তুলতে পারেন না। আমেনা বেগম বলেন, আমি ফোনের তেমন কিছুই বুঝি না। ছেলে বিদেশ থেকে অ্যানড্রোয়েট ফোন এনে দিয়েছে। সেই ফোন ব্যবহার করে তার ১৫ বছরের নাতি সাদমান।

রাজধানী শ্যামলীর বাসিন্দা শিমু। তিনি একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ক্লাসে শুধু আমার ল্যাপটপ নেই। লেখাপড়ার অনেক কনটেন্ট এখন অনলাইনে সহজে পাওয়া যায়, কিন্তু আমার ল্যাপটপ ও স্মার্ট ফোন না থাকায় আমি ক্লাসে পিছিয়ে। তিনি বলেন, অনেকে দামি ফোন দিয়ে টুকটাক ব্যবসাও করছে কিন্তু আমি সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত।

কর্মক্ষেত্রে নারীর পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা। আর প্রযুক্তির ব্যবহারে নারী পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ নারীদের মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা এখনো কম। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ নারীর মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ আছে, যেখানে পুরুষের হার ৮৬ শতাংশ। ৬০ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়েছে ডিজিটাল সুযোগের অভাবে। প্রযুক্তির সুযোগ বৃদ্ধি করতে পারলে নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবিক ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সমতা এনে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের কাজগুলো চালিয়ে যেতে হবে। শ্রমজীবী নারীরা ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারে এখনো পিছিয়ে আছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসহ নানা দক্ষতার অভাবে। গার্মেন্টসে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে অটোমেশনের কারণে। আধুনিক প্রযুক্তিগুলো নারীবান্ধব করতে হবে, তাদের ব্যবহারের সুযোগ ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ও গুজব বন্ধে বিদ্বেষকারীদের দমনে ডিজিটাল আইন প্রয়োগে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার ও ব্যবহারের সুযোগের ওপর গত বছরের নভেম্বরে একটি প্রাথমিক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষের নিজের মোবাইল ফোন রয়েছে। পুরুষদের মধ্যে ৭২ শতাংশের বেশি এবং ৫১ শতাংশের বেশি নারীর নিজস্ব মোবাইল ফোন রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুরুষের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ কম নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। ইন্টারনেট ব্যবহার না করার পেছনে ৬৮ শতাংশ নারীই জানান, তাদের ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয় না, কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানেন না।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে  মোবাইল ফোন অর্থনীতি-২০২২ প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় ২৩ শতাংশ কম নারীর নিজস্ব মোবাইল ফোন আছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীকে ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করা জরুরি। নারী-পুরুষের সমতার পথে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় প্রযুক্তির ব্যবহারে সমাজ ও মানুষকে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম