শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

পড়াশোনা

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ০৬:৩১

শিক্ষাবর্ষের তিন মাস চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণির ১ম সাময়িক পরীক্ষার সূচিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন কারিকুলামের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠদান ও মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এখনো ধোঁয়াশা চলছে। এই মূল্যায়নের পুরো কাঠামো এখন তৈরি হয়নি।

চলতি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম শুরু হয়েছে। নতুন কারিকুলামে এই দুই শ্রেণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। কিন্তু এই মূল্যায়নের পুরো কাঠামো এখনো তৈরি করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ফলে যা হবার তা-ই হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

শিক্ষকরা বলছেন, বিদ্যালয়ে বছরব্যাপী শিখন কার্যক্রম চলাকালীন শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি এবং আচরণের নানামুখী বিকাশ সম্পর্কে জানার জন্য ধারাবাহিকভাবে যাচাই করা হবে, যা শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর বছর শেষে একবার পরীক্ষা হবে যেটি সামষ্টিক মূল্যায়ন।

এনসিটিবি বলেছে, এই দুই শ্রেণির ধারাবাহিক বা শিখনকালীন মূল্যায়ন চলছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন চলছে। কিন্তু স্কুলগুলোর চিত্র ভিন্ন। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি শিক্ষকরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে শিক্ষকদের আরো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হবে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া নতুন কারিকুলামের আলোকে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। তাই অনেকেই এই মূল্যায়ন শুরু করছে না।

অভিভাবকরাও বলছেন, ‘এই দুই শ্রেণির পড়াশোনা ও মূল্যায়ন কীভাবে হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। আদৌ মূল্যায়ন হচ্ছে কি না, তা জানতে পারছি না। শিক্ষার্থীদেরও এই মূল্যায়নের বিষয় কিছু বলা হচ্ছে না। অথচ আমরা শুনেছি, নতুন কারিকুলামে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন হবে। এই মূল্যায়নে আমার সন্তান কোন অবস্থানে রয়েছে তা পরিষ্কার নয়। আমরা পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছি।’

কারিকুলাম অনুযায়ী, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট হবে না। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকরা এই দুই শ্রেণিতে প্রচলিত পরীক্ষা নিতে চান। কিন্তু সহকারী শিক্ষকরা নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়টি তাকে অবহিত করলেও তা নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষকদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হচ্ছে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবহিত। শিক্ষকরা আমাকেও বলছেন। প্রধান শিক্ষকরা এখনো প্রশিক্ষণ পাননি। তাই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অতি দ্রুত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রশিক্ষণ পাবেন। তখন তারা এই কারিকুলাম সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন।’

শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানেন, নতুন কারিকুলামে বছর শেষে একটি সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। কিন্তু এখন হবে ছয় মাস পর। কেন ছয় মাস পর পরীক্ষা হবে এ বিষয়ে এনসিটিবির এই সদস্য বলেন, শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন পরীক্ষা না থাকলে শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি দেয় না। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করা হয়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই পরীক্ষা ছয় মাস পর হচ্ছে। তবে এই মূল্যায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে কাজ চলছে। এ বিষয় একটি সফটওয়্যারের তৈরি করা হচ্ছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

মূল্যায়ন নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় গতকাল শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা এবং শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে সম্পাদন করতে হবে, এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা/মডেল টেস্ট গ্রহণ করা যাবে না, এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে এনসিটিবি থেকে যে গাইডলাইন পাওয়া যাবে, তা পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

ইত্তেফাক/ইআ