বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

কেএনএফে’র গুলিতে নিহত সেনা সদস্যের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রংপুরে দাফন

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ২০:২২

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে কেএনএফে’র গুলিতে নিহত মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিনের পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রংপুরে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকাল ১১টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে রংপুর সেনানিবাসে তার লাশ আনা হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় নগরীর মর্ডাণ কোর্টপাড়ার বাড়িতে সেনা সদস্যরা ঘাড়ে করে কফিনে সেনা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে আনেন। এ সময় তার লাশ একনজর দেখতে এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনদের ঢল নামে। বাদ যোহর বাড়ির সামনে গাছ বাগানে নাজিম উদ্দিনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়ে। শত শত মানুষ জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। এরপর সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। লাশ দাফন ও দোয়া শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করেন সেনা সদস্যরা।


 
কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) অতর্কিত গুলিবর্ষণে নিহত সেনা সদস্য মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসতে চাওয়া নাজিম উদ্দিন যে নিথরদেহে বাড়ি ফিরবেন কেউ ভাবতেই পারেনি। তার এমন মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গ্রামবাসীও শোকে মূহ্যমান। মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়ায় নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। কাঁদতে কাঁদতে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া স্ত্রী ও দুই সন্তান হয়ে পড়ছেন অচেতন। মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন বিগত ৩০ বছর ধরে অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রংপুর সদর উপজেলার ঘাঘটপাড়া গ্রামের মৃত শমসের আলীর ছেলে। নাজিম উদ্দিনরা দুই ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন ছিলেন সবার বড়।


  
মৃত ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে স্ত্রী চামেলি বেগমের সর্বশেষ কথা হয়েছিল শনিবার দুপুরে। পরদিন সোমবার (১৩ মার্চ) বিকালে আসে স্বামীর মৃত্যুর খবর। চামেলির সবকিছুই ছেয়ে গেছে ঘোর অন্ধকারে। নিজের কথা না হয় বাদই থাকল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বড় সন্তান নায়েমুজ্জামান চঞ্চল এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমান নীরবের ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। সে ভাবনা দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে চামেলিকে। নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী চামেলি বেগম ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। কিছু বলতে পারছিলেন না। শুধু হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। স্বজনরা তাকে সান্তনা দিলেও নিজেকে সামলে নিতে পারছিলেন না চামেলি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার সব স্বপ্ন তো ভেঙে গেল। এখন ছেলে দুটোকে কীভাবে পড়ালেখা করাব কি হবে আমাদের? কেন আল্লাহ আমার স্বামীকে এভাবে কেড়ে নিলো। সরকারের কাছে চাওয়া আমার সন্তানদের যেন দায়িত্ব নেন।  

নাজিম উদ্দিনের ছোট ভাই আজিম উদ্দিন বলেন, আমার ভাই একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। তিনি গ্রামের সকলের সঙ্গে ভালো আচারণ করতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই আমাদের বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন। বাবার কমতি বুঝতে দেননি। আমরা সেই বড় ভাইকে হারিয়ে আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আত্মত্যাগের জন্য পরপারে মহান আল্লাহ আমার বড় ভাইকে ভালো রাখবেন এই দোয়া করছি। 

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, দেশের জন্য নাজিম উদ্দিনের এই আত্মত্যাগকে শহীদি মৃত্যু বলে মনে করেন। তিনি চান নাজিমের পরিবারের পাশে এগিয়ে আসবে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ যেন নিহত নাজিম উদ্দিনের সন্তানদের পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। একই সঙ্গে এতিম এ পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বিষয়টি সরকারের নিশ্চিত করা উচিত। কারণ নাজিম উদ্দিনের এই মৃত্যু দেশের জন্য।

ইত্তেফাক/পিও