রাজনীতিবিদ, আমলা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, বিচারক ও সাংবাদিকসহ রাষ্ট্রীয় পদধারীদের কাছে থাকা বিদেশি উপহারের তালিকা প্রকাশ করেছে পাকিস্তান সরকার। এতে বেরিয়ে এসেছে দেশটির বর্তমান ও সাবেক ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তির অনিয়মের ঘটনা। দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার (১২ মার্চ) ২০০২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তোষাখানা উপহারের রেকর্ড প্রকাশ করেছে দেশটির ফেডারেল সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তোষাখানার বিস্তারিত এ হালনাগাদ প্রকাশ করা হয়।
সেখানে দেখা গেছে, তোষাখানা উপহার থেকে উপকৃত হয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের তালিকায় দেশটির অনেক গণ্যমান্য বিশিষ্টজন রয়েছেন। ওই তালিকায় প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রয়াত সামরিক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাফরুল্লাহ খান জামালি, সিনেট চেয়ারম্যান সাদিক সানজরানি, অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারিসহ উঠে এসে আরও অনেকের নাম।
নথি অনুসারে, মাত্র কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ উপহারই বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে নিজেদের কাছে রেখেছেন এই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
পাকিস্তানের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন রাজনীতিবিদের তোষাখানা উপহারের বিস্তারিত তুলে ধরেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডন।
আসিফ আলি জারদারি
প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট জারদারি ২০০৯ সালের ১৬ জানুয়ারি একটি সাদা রঙের বিএমডব্লিউ ৭৬০ (সিকিউরিটি ভার্সন) নিজের কাছে রাখেন। গাড়িটির মূল্য ২৭.৩ মিলিয়ন রুপি নির্ধারিত হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট পরিশোধ করেছিলেন মাত্র ৪ মিলিয়ন রুপির কিছু বেশি।
এছাড়া, ২০১১ সালে তিনি বেশকিছু ঘড়ি ও অন্যান্য মূল্যবান উপহার এবং একটি বন্দুক তোষাখানা থেকে নিয়েছিলেন। কয়েকশো মিলিয়ন রুপির সেসব উপহারের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট পরিশোধ করেছিলেন মাত্র ৩.২৫ মিলিয়ন রুপি।
নওয়াজ শরিফ
২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ উপহার পেয়েছিলেন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ। গাড়িটির মূল্য ৪.২৫ মিলিয়ন রুপি হলেও মাত্র ০.৬৩৬ মিলিয়ন রুপি পরিশোধের মাধ্যমে তিনি এটি নিজের করে নেন।
ইমরান খান
ক্ষমতায় থাকাকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ৩.৮ মিলিয়ন রুপি মূল্যের একটি গ্রাফ ঘড়িসহ পাঁচটি মূল্যবান হাতঘড়ি উপহার পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে মাত্র ০.৭৫৪ মিলিয়ন রুপি দিয়ে তিনি উপহারগুলো নিজের কাছে রাখেন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৮৫ মিলিয়ন রুপির একটি গ্রাফ ঘড়ি, ৫.৬ মিলিয়ন রুপির এক জোড়া কাফলিঙ্ক, দেড় মিলিয়ন রুপির একটি কলম এবং ৮.৭৫ মিলিয়ন রুপির একটি আংটির জন্য মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে রোলেক্স ব্র্যান্ডের মূল্যবান ঘড়িসহ আরও বেশকিছু উপহার অল্প কিছু অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে নিজের কাছে রাখেন ইমরান।
এছাড়া, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বুশরা বিবি ৯ মিলিয়ন রুপির একটি নেকলেস, ২.৪ মিলিয়ন রুপির একটি ব্রেসলেট, ২.৮ মিলিয়ন রুপির একটি আংটি এবং ১.৮৫ মিলিয়ন রুপি মূল্যের এক জোড়া কানের দুলের বিনিময়ে মাত্র ৯ মিলিয়ন রুপি পরিশোধ করেন।
আরিফ আলভি
তোষাখানার প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির স্ত্রী সামিনা আলভি ১.১৯ মিলিয়ন রুপির একটি নেকলেস ৮৬৫,০০০ রুপির বিনিময়ে নিজের করে নেন।
এদিকে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নিজেও আড়াই মিলিয়ন রুপির একটি রোলেক্স ঘড়ির জন্য পরিশোধ করেন মাত্র ১.২ মিলিয়ন রুপি।
পাকিস্তানের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য, আমলা, বিচারক ও সেনা কর্মকর্তারা তোষাখানার নিয়ম ভেঙে নামমাত্র মূল্যে বিদেশি উপহারসামগ্রী নিজেদের কাছে রেখেছেন। স্বচ্ছতা আনতে এসব তথ্য এখন প্রকাশ করছে দেশটির সরকার।