মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

জার্মানির 'জাম্বো' সংসদের আসন কমানো হচ্ছে

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ১০:৫২

নির্বাচনী সংস্কারের মাধ্যমে জার্মানির সংসদের সদস্য সংখ্যা কমানোর সরকারি উদ্যোগ নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। দুটি বিরোধী দল প্রস্তাবিত আইন চ্যালেঞ্জ করে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হবার হুমকি দিয়েছে। 

জার্মানির জনসংখ্যা প্রায় আট কোটি ৩০ লাখ হলেও সে দেশের সংসদের নিম্ন কক্ষে বর্তমানে রেকর্ড ৭৩৬ জন সদস্য রয়েছেন। জটিল নির্বাচনি আইনের দৌলতে গত নির্বাচনের পর এত সংখ্যক জনপ্রতিনিধি চার বছরের জন্য বেতন ও নানা আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন। 

কোনো ঊর্ধ্বসীমা না থাকায় ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজকোষের উপর চাপ কমাতে বেশ কিছুকাল ধরে জার্মানির নির্বাচনি আইন সংস্কারের উদ্যোগ সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে এতকাল সাফল্য পাওয়া যায় নি। 

এবার চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে তিন দলের জোট সরকার নিজস্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সেই 'সাহসী' পদক্ষেপ নিতে চলেছে। চলতি সপ্তাহে জার্মান সরকার যে আইন অনুমোদনের উদ্যোগ নিচ্ছে, তার আওতায় বুন্ডেসটাগের সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৬৩০ অতিক্রম করতে পারবে না। 

রাজকোষের উপর চাপ কমাতে বেশ কিছুকাল ধরে জার্মানির নির্বাচনি আইন সংস্কারের উদ্যোগ সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাবে এতকাল সাফল্য পাওয়া যায় নি। 

গত জানুয়ারি মাসে সরকার যে খসড়া প্রস্তুত করেছিল, তাতে সেই সংখ্যা ৫৯৮ রাখা হয়েছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কিছু নির্বাচনি কেন্দ্র থেকে কোনো জনপ্রতিনিধি সংসদে প্রবেশ না করার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় ঊর্ধ্বসীমা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।

জার্মানির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জটিলতার মূলে রয়েছে ভোটার প্রতি দুটি করে ভোট। প্রথম ভোট যায় পছন্দের প্রার্থীর জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের রাজনৈতিক দলের জন্য। সেই দ্বিতীয় ভোটের সংখ্যা অনুযায়ী প্রত্যেক রাজ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বাড়তি সংসদ সদস্য মনোনয়ন করতে পারে। 

জার্মানির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জটিলতার মূলে রয়েছে ভোটার প্রতি দুটি করে ভোট।

তার উপর সরাসরি নির্বাচিত প্রার্থী ও তালিকার দৌলতে মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে জটিল হিসেবের কারণে বাড়তি কিছু আসন সৃষ্টি হয়। এমন সব প্রচলিত নিয়মের কারণে সংসদের নিম্ন কক্ষ ফুলেফেঁপে ওঠে। 

আইনের বর্তমান খসড়া অনুযায়ী নির্বাচনি কেন্দ্রের সংখ্যা ২৯৯ রাখা হলেও রাজ্য তালিকায় ৩৩১টির বেশি আসন থাকবে না। বলা বাহুল্য জার্মানির বিরোধী দলগুলির মধ্যে এই সংস্কারকে কেন্দ্র করে তুমুল অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

 

বিশেষ করে, বাভেরিয়ার সিএসইউ দল ও বামপন্থি দল 'ডি লিংকে' সরকারের এই আইন বাতিল করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হবার হুমকি দিয়েছে। উল্লেখ্য, এই দুই দল বর্তমান নির্বাচনি নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে এসেছে। 

বিশেষ করে, বাম দল মাত্র তিনটি আসন সরাসরি জিতলেও দু-দুবার সংসদীয় দলের মর্যাদা ও বাড়তি আসন পেয়েছে। সংসদে প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের সিডিইউ দল এই উদ্যোগের সমালোচনা করে বলেছে, নির্বাচনি আইনের সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের যে দস্তুর রয়েছে, বর্তমান সরকার তা অগ্রাহ্য করেছে। 

বাভেরিয়ার সিএসইউ দল ও বামপন্থি দল 'ডি লিংকে' সরকারের এই আইন বাতিল করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হবার হুমকি দিয়েছে।

ফলে বর্তমান পরিকল্পনা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে না বলে দলের সাধারণ সম্পাদক মারিও চায়া দাবি করেন। সিএসইউ দলের প্রধান ও বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার সরকারের পদক্ষেপকে 'গণতন্ত্রের উপর হামলা' হিসেবে বর্ণনা করেন। 

বাম দলের প্রধান জানিন ভিসলারও সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষকে অবজ্ঞার অভিযোগ করে জানান, এই পরিকল্পনার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

ইত্তেফাক/ডিএস