শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

উত্তরখান-দক্ষিণখান সড়কে গর্ত ও ইট-বালু স্তুপ, জনদুর্ভোগ চরমে

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ১৪:২২

রাজধানীর উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় নতুন সাতটি ওয়ার্ড ঘোষণা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। রাস্তাঘাট মেরামত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে আজমপুর কাঁচাবাজার সড়কের মাঝখানে ইট, বালু স্তুপ করে রাখার পাশাপাশি গর্তের কারণে এসব সড়কে চলাচলে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।

আজমপুর রেললাইন হতে উত্তরখান মাজার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে নাজেহাল হচ্ছেন অফিসগামীসহ স্কুল, কলেজও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নতুন এই সাতটি ওয়ার্ডের খানাখন্দ ভরা ভাঙা সড়কগুলো মানুষের চরম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই নতুন নতুন দুর্ভোগ পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা শামীম জানান, মূল সড়কের পাশাপাশি শাখা রাস্তার চরম বেহাল দশা। বৃষ্টি ছাড়াই অনেক জায়গায় ড্রেন থেকে ময়লা পানি উঠে রাস্তা তলিয়ে যাচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানকার নতুন সাতটি ওয়ার্ডের সড়কগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে মনেই হয় না এগুলো সিটি করপোরেশনের রাস্তা।

রাজধানীর উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় সড়কে সড়কে গর্ত। ছবি: ইত্তেফাক

ভুক্তভোগীরা জানান, উত্তরখান ও দক্ষিণখান ইউনিয়ন দুটি নতুন করে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হলেও অদৃশ্য কোনো কারণে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে উন্নয়নের দৃশ্যমান ছোঁয়া লাগেনি। নতুন ওয়ার্ডগুলোর রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। অসুস্থ রোগী ছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা ও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তায় চলাচল করতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতে এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। সু-পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তায় পানি দীর্ঘক্ষণ জমে থাকার কারণে বর্ষাকালে অধিকাংশ রাস্তা মানুষ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠে।

নতুন ৭টি ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লার রাস্তাগুলো বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে গিয়েছে, বেশিরভাগ কাঁচারাস্তায় ইটের সলিং ভেঙে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। এই সমস্যাগুলোর মধ্যেই প্রতিদিন পথ চলতে হচ্ছে উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার নতুন ৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের। পুলিশ ফাঁড়ি থেকে জয়নাল মার্কেট, গণকবরস্থান থেকে দক্ষিণখান থানা রোড, বাবুর্চী বাড়ি রোড, হলান অটোস্ট্যান্ড থেকে নর্দাপাড়া আশকোনা প্রাইমারি স্কুল, উচ্চারটেক মেডিক্যাল রোড, দক্ষিণখান থেকে নগইরাবাড়ী রোড, পণ্ডিতপাড়া থেকে সোনার খোলা, সিটি কমপ্লেক্স রোড, দক্ষিনখান বাজার থেকে মাজার রোড, মাস্টারপাড়া হতে বালু মাঠ, শাহ কবির মাজার থেকে দক্ষিণখান, চামুরখান থেকে উত্তরখান থানা রোড, দোবাইদা থেকে সাইনবোর্ড, আটিপাড়া থেকে রাজাবাড়ী, কাঁচকুড়া বাজার থেকে বাওথার, মুন্ডা মাউসাইদ, রাজাবাড়ি ও কাওলার সড়কগুলো একেবারেই বেহাল দশা। এছাড়াও অভ্যন্তীরণ রাস্তাগুলোর এতোটাই খারাপ অবস্থা পায়ে হেঁটে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।

এলাকাবাসীর আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের এই ইউনিয়ন দুটি, সিটি করপোরেশনের আওতায় নেওয়ায় আমরা আরও বেশি বিপদে আছি। আমাদের নিয়মিত ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে, আমরা সেগুলো পরিশোধ করছি কিন্তু আমরা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা তেমন পাচ্ছি না।

এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। এ রাস্তাগুলোতে দৈনিক কয়েক হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। কিন্তু নতুন ওয়ার্ডগুলোর রাস্তা ভাঙাচোরা থাকায় পথচারী ও যাত্রীরা নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।

রাস্তাঘাট মেরামত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়কের অবস্থা। ছবি: ইত্তেফাক

৫০নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ডি এম শামীম বলেন, একনেক প্রকল্পের চার হাজার ২৫ কোটি টাকা, সরকারি বরাদ্দের কিছু অংশ ছাড় হওয়ায় আমার ওয়ার্ডে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাঙা সড়ক ও ড্রেনের কাজ শুরু করি। এছাড়াও তিনি মূলসড়কে কয়েকশ টিউবলাইট লাগিয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দের একটা অংশ ছাড় হলেও এটি চাহিদার তুলনায় অনেক কম তবে উন্নয়নের কাজ চলছে। এছাড়াও মাজার থেকে আজমপুর পর্যন্ত ছয় ফিট ফাইভের কাজ উদ্বোধন হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে।

ডিএনসিসির অঞ্চল-৭’র আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নায়ন জানান, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডকে আমরা সত্যিকার অর্থেই মেইন স্টিমিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি ২৪ বিগ্রেড সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে নতুন কয়েকটি ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দের অর্থের একটা অংশ ছাড় হয়েছে।

তিনি জানান, মহাপরিকল্পনার আওতায় আনা সড়কের আয়তন নির্ধারণ, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ, পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। রাস্তায় রাখা মালামাল সরাতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। ঠিকাদার যানজট নিরসনে আজমপুর কাঁচাবাজার এলাকায় রাস্তার মাঝখানে রাখা মালামাল সরিয়ে নেবে বলে জানিয়েছেন।

ইত্তেফাক/আরএজে