বাংলাদেশে এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা অনেক কমে গেছে। তবে বেড়েছে নারীর ওপর অন্যান্য ধরনের সহিংস নির্যাতনের ঘটনা। বিশেষ করে অনলাইনে নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেশি বাড়ছে। এসিড সহিংসতা কমে গেছে বলে তৃপ্তির ঢেকুর না তুলে আমাদের সকলের উচিৎ হবে নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে আরও বেশি করে সচেতনতা বাড়ানো। পাশাপাশি এসিডদগ্ধ নারীদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকালে বগুড়া শহরের জহুরুলনগরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউজের সভা কক্ষে এসিড সহিংসতাসহ জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা নিরসনের লক্ষ্যে বগুড়ায় এসিড সারভাইভারস নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানের অতিথিরা এসব কথা বলেন। এসিড সারভারভাইস ফাউন্ডেশনের কারিগরি সহায়তায় স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লাইট হাউজ এর উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে এসিড সারভারভাইস ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তহমিনা ইসলাম বলেন, তাদের সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে এসিড হামলার শিকারদের নিয়ে কাজ করে আসছেন। এক দশক আগেও সারাদেশে এসিড সহিংতার ঘটনা অনেক বেশি থাকলেও বর্তমানে তা অনেকাংশে কমে গেছে। সামাজিকভাবে আন্দোলন, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং আইনের কড়াকড়িতে কমে আসতে থাকে ঘটনার সংখ্যা। এরপরও এ নিষ্ঠুরতা ঘটে চলেছে, যার প্রধান শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশু।
সর্বশেষ গত ২০২২ সালে সারাদেশে ২৯টি এসিড সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৬ জন নারী, ১১ জন পুরুষ ও ২ জন শিশু আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এসিড সহিংসতা অনেক কমে গেলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। সাইবার ক্রাইম বেড়েছে অনেক বেশি।
অনলাইনে নির্যাতনের অভিযোগ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। তাই এখনও সময় আছে নারী ও মেয়েদের তথ্য প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহার করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। যারা এসিডদগ্ধ হয়েছে তাদেও সরকারিভাবে সাহায্যে করা। এদের পুর্ণবাসন করতে হবে। তিনি বগুড়ায় এই প্রকল্প নেওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, সারাদেশে ১০টি জেলা এসিড সহিংসতার শিকার বেশি, তার মধ্যে বগুড়া জেলা অন্যতম। বিগত বছরগুলোতে এই জেলায় অনেক এসিড সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন আর সেই অবস্থা নেই।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মোছা. আফসানা ইয়াসমিন বলেন, বগুড়া জেলায় ২০১৩ সালের পরে এসিড সহিংসতার ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। বর্তমানে ৮টি মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলা ২০০৫ থেকে ২০১৩ সালের ঘটনা। তিনি বলেন, এসিড সহিংসতা কমলেও অন্য ক্ষেত্রে নারী নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, এসিড সহিংসতার অনেক ঘটনায় প্রভাবশালীদের চাপে বাদী পক্ষ আপোষ মীমাংসা করে নেন।
লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান হারুন-অর-রশীদ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ শাহানাজ পারভীন, জেলা শিক্ষা অফিসার হযরত আলী, পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন, বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট আশেকুর রহমান সুজন, সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ নুরসহ অনেকে।
সভায় বগুড়া জেলা এসিড প্রতিরোধ কমিটির সদস্যবৃন্দ, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্ত, সাংবাদিক, ঢাকা এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বগুড়ার এসিড ভিকটিমগণ উপস্থিত ছিলেন।