জার্মানির রাজধানী বার্লিনে সবুজের অভাব নেই। শহরের মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের জন্য চাষবাস, প্রকৃতি ও সংরক্ষণ সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিচ্ছে অসংখ্য কমিউনিটি গার্ডেন। গত রাতে তুষারপাতের পর স্কুলের সবজির খেতের কী অবস্থা? কোরা, হিরা, মাক্স ও ইয়োহানেস সেটা জানতে চায়।
কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের ক্লাস রাইয়ের ছোট খেত প্রস্তুত করেছে। হিরা বলেন, 'এখন কয়েকটি চারা গজিয়েছে। গতবার আমরা কিছুই দেখতে পাই নি। আমরা সবে বীজ বপন করেছিলাম।'
বার্লিন শহরের মধ্যে হাইওয়ের ধারেই এই গার্ডেনিং স্কুল অবস্থিত। প্রায় ১০ হাজার বর্গ মিটার জুড়ে অনেক গাছ, ছোট আঙুরের খেত, পুকুর ইত্যাদি রয়েছে। স্কুল পড়ুয়ারা সেখানে হাতেনাতে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পায়।
গার্ডেনিং স্কুলের শিক্ষিকা সুসানে ম্যুলার-কাল বলেন, 'বার্লিনের গার্ডেনিং স্কুলগুলো শহরের সবুজ ও শিক্ষামূলক জমিতে অবস্থিত। কয়েকটি এমনকি একশো বছরেরও বেশি পুরানো। শিশুরা এখানে প্রকৃতি আবিষ্কার করতে পারে, পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষা নিতে পারে। তবে শুধু শিশু নয়, এখন বড়রাও এখানে আসতে পারেন৷ সংরক্ষণ ও পরিবেশের মতো বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে, বা নিছক প্রকৃতির অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে যে কেউ এখানে আসতে পারেন।'
আজ কনিফার জাতীয় গাছ সম্পর্কে শিক্ষার পালা। কাছেই শিশুদের স্কুল। প্রতি মাসে তারা এখানে এসে নানা বিষয়ে জানতে পারে। পৌর কর্তৃপক্ষই এই গার্ডেনিং স্কুলের অর্থায়ন করে। সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত না হলেও যে কেউ শিক্ষামূলক ইভেন্টে অংশ নিতে পারে।
শহরের পূর্বাংশে একেবারে ভিন্ন ধরনের এক প্রকল্প চলছে। সেটিকে 'ইন্টারকালচারাল কমিউনিটি গার্ডেন' বলা হয়। কমিউনিস্ট জমানার পুরানো ভবনগুলোর মাঝে কয়েক মাস আগে ফসল তোলা হয়েছে। সেখানে যে কেউ সর্বসাধারণের জন্ম উন্মুক্ত খেত ব্যবহার করতে পারে।
নিজস্ব ৪০ বর্গ মিটার খেতের জন্য মাসে ১৫ ইউরো মাসুল দিতে হয়। তবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম নেই। টিম কেগেলার সেই বাগানের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি নিজে অবশ্য মালি নন, সমাজকর্মী।
তিনি বলেন, 'ইন্টারকালচারাল গার্ডেনের ভিন্ন এক কনসেপ্ট রয়েছে। এগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। পাড়ার মধ্যেই সেগুলো অবস্থিত। এগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে আদান-প্রদানও বাড়ায়। আমরা এলাকার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করি, যেমন শরণার্থীদের আবাস, পাশের কিন্ডারগার্টেন বা রাস্তার অন্য দিকের প্রাইমারি স্কুল।'
শহরে বেশ কয়েক ডজন কমিউনিটি গার্ডেন রয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটায়। দীপ্তি আকোরথ ও তার স্বামী বিপিন মাধবানুনি আরও বাস্তবধর্মী বাগানের কনসেপ্ট বেছে নিয়েছেন।
ভারত থেকে আসা এই দুই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শহরের উপকণ্ঠে একটি বাগান ভাড়া নিয়েছেন। বাসা থেকে সাইকেলে চেপে কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছানো যায়। এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত তারা সেখানে শাক-সবজির চাষ করেন।
দীপ্তি বলেন, 'কোভিডের সময়ে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। কারণ সে সময়ে অন্য কিছুই করার ছিল না। বাসা থেকেই কাজ করছিলাম। ফলে এভাবে বাসার বাইরে গিয়ে ভালো কিছু করার সুযোগ পেলাম। অন্য কিছু করার উপায় ছিল না। আমারা ভ্রমণ করতে পারছিলাম না। এ বছরও একই কাজ চালিয়ে গেছি।'
ফসল তোলার মৌসুমের জন্য গার্ডেনিং স্কুলের শিশুদের আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে শীতকালে 'কনিফার' বিষয়ের কল্যাণে তারা এখন চিরসবুজ গাছ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। নিয়মিত বাগানে যাবার কারণে প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ও কদর বাড়বে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর বহুকাল পরেও সেই জ্ঞান তাদের কাজে লাগবে।