বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের একই দিনে একই সময়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব হাওলাদারকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এছাড়া আহত হয়েছেন বাউফল থানার ওসি আল মামুন ও আরও পাঁচ পুলিশ সদস্য, পথচারীসহ কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ। গুরুতর আহত আব্দুল মোতালেবকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
বর্তমানে উপজেলা সদরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে বেলা সোয়া ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ঐ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এর আগে বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষ একই দিনে (গতকাল শুক্রবার) একই সময়ে কর্মসূচির ডাক দেয়। এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুটি পক্ষের কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে (জনতা ভবন) এবং মেয়র পক্ষের কর্মসূচি বাউফল প্রেসক্লাব সড়কের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের অপর অংশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হক ওরফে জুয়েলের পক্ষের নেতাকর্মীরা বাউফল সরকারি মাঠে, সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের পক্ষের নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) সামনে ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের পক্ষের নেতাকর্মীরা বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়।
বেলা ১১টার দিকে আব্দুল মোতালেবের নেতৃত্বে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে আনন্দ মিছিল বের হয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের (জনতা ভবন) দিকে যাচ্ছিল। সোয়া ১১টার দিকে মিছিলটি উপজেলা পরিষদের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষ এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের বাধা দেন। তখন পুলিশ ও আব্দুল মোতালেব হাওলাদারের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এদিকে পাশেই লাঠিসোঁটা ও দা নিয়ে অবস্থান করছিল আ স ম ফিরোজের কর্মী-সমর্থকরা। আ স ম ফিরোজ একটি গাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশের সঙ্গে আব্দুল মোতালেবের কথা-কাটাকাটি চলতে থাকে এবং এ সময় স্লোগান দিতে থাকে তার এবং আ স ম ফিরোজের পক্ষের নেতাকর্মীরা। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেবকে বলতে শোনা যায়, তিনি যেহেতু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। একপর্যায়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কয়েক রাউণ্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। ঠিক সেই সময় আব্দুল মোতালেবের ওপর হামলা চালায় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের অনুসারীরা। তারা আব্দুল মোতালেবকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে রাব্বি (৩০), মো. হাসান (২৬), মো. হাসিব (৩২) মো. খোকা মিয়াসহ (৫০) আব্দুল মোতালেবের কয়েক জন কর্মী আহত হন। তখন আব্দুল মোতালেবের সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে ওসি আল মামুন, উপ-পরিদর্শক (এসআই) এম এ হাসান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. হুমায়ুন কবির ও মো. শাহিন এবং কনস্টেবল মো. আবু রাহাত ও মো. রবিউল এবং পথচারীসহ কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হন।
আধা ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি থানার মূল ফটকও আটকে দেওয়া হয়। আহত আব্দুল মোতালেবকে বরিশালের হাসপাতালে পাঠানোর পর তার নেতাকর্মীরা স্থান ত্যাগ করেন। তখনো সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকের পূর্ব পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে তাদেরও বাধা দেয় পুলিশ।
পরে দুপুর ১২টার দিকে মেয়র জিয়াউলের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল উপজেলা চত্বরে এসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে চলে যায়। এরপর বেলা সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে একটি মিছিল বাউফল শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে যায়।
বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা এ এস এম সায়েম জানান, চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেবের এক হাতের একটি আঙুল কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে আছে। তার বুকের ডান পাশে ও ডান হাতের কনুইয়ের ওপরের অংশে কোপের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও পা ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আল মামুন বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০ রাউণ্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে তিনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব নিজ দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে।’