শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা

পুতিনকে গ্রেফতার করা না গেলেও কি বিচার সম্ভব?

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:২১

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। আইসিসি বলেছে, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন অভিযান শুরুর পর পুতিন যুদ্ধের আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘন করেছেন। ইউক্রেনের শিশুদের জোরপূর্বক রাশিয়ায় নিয়ে গেছেন। পুতিনের পাশাপাশি রাশিয়ার শিশু অধিকারবিষয়ক কমিশনার মারিয়া অ্যালেক্সেইভনা লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা বলেছেন, রাশিয়া রোম সংবিধির আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কোনো সদস্য নয় এবং এর নির্দেশ মানার জন্য বাধ্য নয়। রাশিয়া এই আদালতকে কোনো সহযোগিতা করে না। এই গ্রেফতারি পরোয়ানার কোনো ভিত্তি নেই।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, পুতিনকে কি গ্রেফতার করা সম্ভব হবে? গ্রেফতার করা না গেলেও কি তার মামলা চলবে? তিনি কি আদৌ বিচারের মুখোমুখি হবেন? বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া আইসিসিকে স্বীকৃতি দেয় না, তারা তাদের নাগরিকদের বিচারের জন্য হস্তান্তর করবে না। তাই খুব শিগিগরই পুতিন বা বেলোভার আত্মসমর্পণের কোনো সম্ভাবনা নেই।

আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর করিম খান বলেন, আসামি ধরার জন্য আদালতের নিজস্ব কোনো পুলিশ ফোর্স নেই। এজন্য আদালত সম্পূর্ণভাবে আইসিসির ১২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে। পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের কাছে হস্তান্তরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এসব দেশের। তাই এই পরোয়ানার কারণে পুতিনের দেশের বাইরে যাওয়া কঠিন হবে। তিনি এসব দেশে পা রাখলে গ্রেফতার হতে পারেন। যদিও সদস্য দেশগুলো এটা সব সময় মেনে চলে না। আর রাশিয়ার মতো ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করার মতো ঘটনায় অনেক দেশই জড়াবে না।

সুদানের সাবেক নেতা ওমর আল-বশির পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জর্দানের মতো আইসিসির সদস্য দেশ সফর করেছিলেন। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তি দিয়েছিল—আইসিসির সদস্য নয় এমন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে গ্রেফতারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন এবং রোম সংবিধিতে কোনো দায়িত্ব রয়েছে বলে তারা মনে করে না। এমনকি ২০১৯ সালে বশির ক্ষমতাচ্যুত হলেও সুদান তাকে হস্তান্তর করেনি।

কলম্বিয়া ল স্কুলের অধ্যাপক ম্যাথু ওয়াক্সম্যান ফরাসি গণমাধ্যম ফ্রান্স২৪কে বলেন, আইসিসির পদক্ষেপ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু পুতিনকে গ্রেফতার হতে দেখার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল-এর সহকারী অধ্যাপক সিসিলি রোজের মতে, রাশিয়ায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে যুদ্ধাপরাধের জন্য পুতিনের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই।

তাহলে কি পুতিনের বিরুদ্ধে মামলা চলবে? বার্তা সংস্থা এএফপিকে করিম খান বলেন, সন্দেহভাজনদের অনুপস্থিতিতে আইসিসি বিচার করতে পারে না। তবে তিনি বলেন, মামলাগুলো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের কাঠামোগত অন্যান্য সুযোগ রয়েছে। তিনি একটি মামলার উদাহরণ টেনে বলেন, উগান্ডায় রক্তাক্ত বিদ্রোহ শুরু করা লর্ডস রেসিসট্যান্স আর্মির নেতা জোসেফ কোনির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিশ্চিত করার জন্য তিনি বিচারকদের শুনানি করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রক্রিয়া পুতিনের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

পুতিন আদৌ বিচারের মুখোমুখি হবেন কি না—এমন প্রশ্নে নাসি যুদ্ধাপরাধী, সাবেক যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচ এবং লিবিয়ার সাবেক নেতা চার্লস টেইলরের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার উদাহরণ দিয়ে করিম খান বলেন, একসময় তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে হতো। তারা সবাই ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

আইসিসির এই পদক্ষেপ ইতিমধ্যে ইতিহাস তৈরি করেছে। এই প্রথম জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী কোনো সদস্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া এই পরোয়ানার কিছু তাৎপর্য রয়েছে। রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য এটি একটি বার্তা যে, তারা এখন বা ভবিষ্যতে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। একই সঙ্গে তাদের আন্তর্জাতিক ফোরামে যোগদানসহ আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সুযোগও সীমিত হবে।

ইত্তেফাক/ইআ